বিশেষ সংবাদদাতা জাহাঙ্গীর হোসাইনঃ
নগরীর বিভিন্ন থানা ও উপজেলার অলি-গলিতে প্রকাশ্যে চলছে মদ গাঁজা ইয়াবাসহ বাহারী নামের মাদক ব্যবসা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসেবে অনুযায়ী ২০০৮ সালে যে পরিমাণ ইয়াবা ব্যবহার হতো ২০১৬ সালে এর ব্যবহার বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছিল। এর বাইরে হেরোইন, গাঁজা ও ফেনসিডিল বহুকাল ধরেই এদেশে অনেক মাদকসেবীরা ব্যবহার করে আসছে।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নতুন যে মাদকের নাম শোনা যাচ্ছে তা হলো- ক্রিস্টাল মেথ বা আইস, এছাড়া আইস পিল।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৫ রকমের মাদক সেবন করা হয়৷ তবে র্যাব-পুলিশের হিসেবে সংখ্যাটা ৬ থেকে ১০-এর মধ্যে৷
প্রকৃতপক্ষে এই মাদকগুলোর উৎপাদন কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে হয়না শুধুমাত্র পাহাড়ি মদ ছাড়া। তবে বিদেশি মাদক গুলো কোন কোন সীমান্ত দিয়ে দেশে আসছে, কীভাবে আসছে? এর বিশেষত কারণ সমূহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এবং তথ্য উপাত্তের সঠিক খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা হবে।
দেশে মাদকসেবীরা যেসব মাদক সেবন করেন, সেগুলোর রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন নাম৷ মাদক চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে নতুন মাদকসেবীরা জানতে পারছে নতুন নতুন মাদকের নাম৷ মাদক ব্যবসায়ীদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করলেও মাদকসেবীদের গ্রেপ্তারে তাদের আগ্রহ কম৷
কারাগারেও তাদের নিয়ে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয় কারা কর্তৃপক্ষের মাদক সেবীদের অস্বাভাবিক আচরণে অতীষ্ঠ হন কারারক্ষীরাও৷
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে এখন পর্যন্ত ২৪ ধরনের মাদক উদ্ধার হয়েছে৷ আর এসব মাদকের মধ্যে রয়েছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজা, চোলাই মদ, দেশি মদ, বিদেশি মদ, বিয়ার, রেক্টিফাইড স্পিরিট, ডিনেচার্ড স্পিরিট, তাড়ি, প্যাথেডিন, বুপ্রেনরফিন (টি.ডি. জেসিক ইঞ্জেকশন), ভাং, কোডিন ট্যাবলেট, ফার্মেন্টেড ওয়াশ (জাওয়া), বুপ্রেনরফিন (বনোজেসিক ইঞ্জেকশন), মরফিন, আইচ পিল, ভায়াগ্রা, সানাগ্রা, টলুইন, পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট ও মিথাইল-ইথাইল কিটোন৷
এদিকে রূপান্তর বাংলার অনুসন্ধানী দল যখন নগরীর বিহারি কলোনি এলাকায় গিয়ে জানতে পারে যে, পাহাড়িকা পাম্পের সংরক্ষিত সীমানায় চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। জানা যায় এখানে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে গড়ে ওঠেছে মাদক চক্রের অভয়ারণ্য।
গত ৫ই আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের তোপের মুখে পতন হয় আওয়ামী সরকারের। এর পরপরই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাদক কারবারি কালোবাজারি ও ছিনতাইয়ের চক্রগুলো। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় চরম বিপর্যয়ের মুখে দেশের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারে নিমজ্জিত।
দেশের আইনশৃংখলা বাহিনীর ডিমে-ডামা পরিস্থতির কারণে সুযোগে সৎব্যবহার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। দেশের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরবতার সুযোগ নিয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অপরাধ চক্রগুলো।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয়তা না থাকার কারণে শহরের যত্রতত্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছিনতাই চক্রসহ মাদক বিকি নিকি সহ নানা ধরণের অপরাধ। দেশের এমন কোন এলাকা নাই, যেখানে পৌঁছায়নি মাদকের ভয়ানক থাবা। বিগত সরকারের আমলে এর ব্যবহার বা সেবনের গোপনীয়তা থাকলেও ছাত্র জনতার সরকারের আমলে এসে কোন বিধি নিষেধ-ই মানছে না মাদক কারবারি চক্র।
দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে গড়ে ওঠেছে ত্রাসের রাজত্ব। প্রতিবাদ হলেই তা কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করে এইসব গ্যাং লিডার।
তাদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট কালেক্ট করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিক সহ সামাজে সাধারণ মানুষ।
জানাগেছে নগরীর আকবর শাহ থানা এলাকার নিউ শহীদ লেন বিহারি কলোনির ও পাহাড়িকা পাম্পের আশপাশ এলাকাজুড়ে রয়েছে এখন অবৈধ অস্ত্রধারী মাদক ব্যবসায়িদের নিয়ন্ত্রণে। আর এসব নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব।
সূত্রে জানা যায় এসব অবৈধ মাদক কারবারি লুটপাট ছিনতাইয়, মাদক ব্যবসার নেপথ্যে রয়েছে নগর বিএনপি নেতার হাত এরা সকলেই যুবদলের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে সূত্র জানায়। চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তি ও খুলশী থানার যুবদলের আহ্বায়ক হেলাল হোসেনের অনুসারী, যুবনেতা মনির ওরফে বাইট্টা মনির ওরফে ইয়াবা মনিরের ছত্রছায়ায় তারই আপন ছোট ভাই যুবনেতা মহিউদ্দিন ওরফে বাইট্টা মহিন এবং তার অনুসারী যুবদলের আবু,করিম,শাহীন,বাবুল,রকি,আলমগীর ও রাজু সহ আরো অনেকেই মিলে গড়ে তুলেছে মাদকের সাম্রাজ্য এবং অবৈধ অস্ত্রের অভয়ারণ্য। ছিনতাই হামলা লুন্ঠন সহ নানা অপকর্মে লিপ্ত এই গ্যাং।
৫ই আগষ্ট সরকার পতনের পর বেশকিছু ব্যানারে তাদের ছবি প্রকাশিত হয়, তাছাড়া মহানগরের বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতাদের সাথে তাদের ছবি ফেসবুক প্রচারের মাধ্যমে তারা এলাকাতে অন্য রকমের ভয়ের সঞ্চার করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
প্রতিদিন সন্ধ্যায় পাহাড়িকা সিএনজি পাম্পের সামনে চলে তাদের মাদকের আড্ডা, রকি ওরফে বাইট্টা রকি মাদক দ্রব্য সরবরাহ কাজে তদারকি করে, এলাকাতে কেউ কিছু বললে বাইট্টা রকি তাদের যুবদলের খুলশী থানার আহ্বায়ক হেলালের অথবা মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি দিপ্তি ভাইয়ের নামে ভয় দেখায়।
মহিউদ্দিন ওরফে বাইট্টা মহিন এর এমন কর্মকান্ডে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। কেউ কিছু বললে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দলবল সহ হামলা করতে তেড়ে আসে।
এবিষয়ে নাম প্রকাশে অন-ইচ্ছুক এলাকাবাসীর কয়েকজন জানান যে, ইতিপূর্বে মাদক ব্যবসায়ীদে কিছু বল্লে মারধরের হুমকি ধামকি দিয়ে চলে যেতো। আর এখন সরাসরি বাসায় এসে ধরে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়।
মাদকদ্রব্য আইনে বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছিল মহিন ও রকি সহ আরো কয়েকজন, সবগুলো মামলাতে তারা জামিনে এসে সে আগের কাজই পরিচালনা করছে। সবশেষ তাদের গ্রেফতার করছিল র্যাব, সেখান থেকেও তারা বর্তমানে জামিনে রয়েছে।
গত ৫ই আগষ্টের পর তারা যে তান্ডব দেখিয়েছে তা আগের সব কিছু কে ছাড়িয়ে গেছে।
এলাকাসীর কয়েকজন জানান যে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় নাম বিক্রি করে প্রচুর অর্থ বিত্তের মালক হয়েছে। সে আওয়ামী লীগ কর্মীও না, তার বাড়িতেও হামলা করছে। লুটপাট ডাকাতি হতে শুধু বাড়িঘর না এমনকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও হামলা চালানো হয়।
বর্তমান প্রশাসনের নিরব ভূমিকা এদের আরো বেপরোয়া করে তুলেছে, এতে নগর বাসীর সকল শ্রেনী পেশার লোকজন এদের অত্যাচার নিপীড়নে অতিষ্ট হয়ে উঠছে। অপরদিকে আর একজন ভুক্তভোগী বলেন যে, এরা সমাজের বিষফোঁড়া, মাদক,অস্ত্র, চুরি, ডাকাতি সহ আরো নানান অপকর্মের সাথে জড়িত সংগঠিত এই চক্রটি যে কারণে এলাকার যুবসমাজের উপর ভীষণ প্রভাব পরেছে। তাদের বিরুদ্ধে মাদক, হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট সহ নানা অপকর্মের নামে নানা অভিযোগ থাকার পর ও শুধু মাত্র রাজনৈতিক পরিচয় তাদের ধরাছোঁয়ার বাহিরে রেখেছে।