ময়মনসিংহে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য! মৃত্যুর জন্য দায়ী কে ১ম না ২য় প্রেমিকা

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থীর সাথে দীর্ঘ দিনের প্রেমের সম্পর্ক একই এলাকার এক মেয়ের সাথে। প্রেমের সম্পর্কের বিষয় উপেক্ষা করে প্রেমিকার অন্যত্র বিয়ে হয়ে যাচ্ছে জেনে প্রেমিক বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। প্রেমের প্রমাণ হিসেবে প্রেমিক কিছু ছবি ও ভিডিও ক্লিপ প্রেমিকার মোবাইল ফোনে পাঠায়। প্রেমিকার পরিবারে বিষয়টি জানাজানি হয়। এমতাবস্থায় প্রেমিকার বাবা বাদী হয়ে প্রেমিকসহ ৪ জনের নামে থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশে পর্নোগ্রাফি আইনে অভিযোগ দায়ের করেন। প্রেমিককে ধরতে প্রেমিকার পরিবারের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে অভিযানে যায় ডিবি পুলিশ। প্রেমিককে বাসার সামনে পাওয়া যায় আহত অবস্থায়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান প্রেমিক যুবক। এই রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। বাড়ি থেকে পালিয়েছে প্রেমিকার পরিবারের লোকজন। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহ নগরীতে।

নিহত যুবকের নাম ফয়সাল খান শুভ (৩০)। জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কাশিপুর এলাকার মো. সেলিম খানের ছেলে। সে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করে নগরীর কেওয়াটখালী পাওয়ার হাউজ রোডের বোন জামাইয়ের বাসায় বসবাস করে চাকরীর জন্য চেষ্টা করছিল।

নিহতের পরিবার জানায়, ময়মনসিংহ নগরীরতে বাসায় অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। এসময় ৫ তলার ছাঁদ থেকে পড়ে ফয়সাল খান শুভ গুরুতর আহত হয়। গুরুতর আহত ফয়সালকে প্রথমে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সকালে ঢাকা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে গত ১০ নভেম্বর রাত ৯ টার দিকে নগরীর কেওয়াটখালী পাওয়ার হাউজ রোডের ৫৫/৬ বাসার ছাঁদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয় ফয়সাল।

ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম খান মারা যাবার বিষয়টি নিশ্চিত করছেন।
নিহত ফয়সালের পরিবার সুত্র জানায়, ফয়সাল খান শুভর সাথে একই গ্রামের সুলতান উদ্দিনের মেয়ে সাদিয়া তাহসিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। দীর্ঘ ৪ বছর চলে দু’জনের প্রেম। সম্প্রতি সাদিয়া তাহসিনের সরকারী চাকুরী হয়। সেখান থেকে সাদিয়া তাহসিন এক ট্রেনিং এ গিয়ে তার ব্যাচ-মেটের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান এবং ফয়সাল খান শুভ’র সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।

এদিকে, সাদিয়া তাহসিনের সাথে তার ব্যাচ-মেটের বিয়ে ঠিক হয়। সেই বিয়ে শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) হওয়ার কথা ছিল। বিষয়টি ফয়সাল জানতে পেরে সাদিয়া তাহসিনের প্রেমিকের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে তাদের চার বছরের সম্পর্কের কথা জানায় ও কিছু ছবি-ভিডিও তার কাছে পাঠায় ফয়সাল। পরে সাদিয়া তাহসিনের প্রেমিক তাকে বিষয়টি জানালে পরিবারে বিষয়টি জানাজানি হয়। এমতাবস্থায় সাদিয়া তাহসিনের বাবা সুলতান উদ্দিন গত ১ নভেম্বর ঈশ্বরগঞ্জ থানায় ফয়সাল খান শুভসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করে পর্নোগ্রাফি আইনে অভিযোগ দায়ের করেন।

এ ঘটনার পর গত ১০ নভেম্বর রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ডিবি পুলিশ নগরীর কেওয়াটখালী পাওয়ার হাউজ রোডের ৫৫/৬ বোন জামাইয়ের বাসায় অভিযানে যায়। অভিযানের সময় ডিবি পুলিশের সাথে সাদিয়া তাহসিনের বাবা সুলতান আহমেদ খান ও তার দুই ছেলে আসিফ রহমান খান অপু ও আহনাফ আব্দুল্লাহ খান অনির্বান ছিল। ডিবি পুলিশ বাসায় ডুকতে চাইলে নিহত ফয়সালের বোন জামাই মোহসিন কেচি গেইট খুলে দিলে পুলিশ বাসার দ্বিতীয় তলায় অভিযান চালায়।

তবে, ফয়সালকে বাসার দ্বিতীয় তলায় খুঁজে না পেয়ে সাদিয়া তাহসিনের বাবা সুলতান আহমেদ খান ও তার দুই ছেলে আসিফ রহমান খান অপু ও আহনাফ আব্দুল্লাহ খান অনির্বান বাসার ছাদে উঠে ফয়সাল খানকে খুঁজতে যায়। পরে সুলতান আহমেদ খান ও তার দুই ছেলে আসিফ রহমান খান অপু ও আহনাফ আব্দুল্লাহ খান অনির্বান ছাদ থেকে নেমে জানায় সেখানে ফয়সাল নেই এবং ডিবি পুলিশের সাথে বের হয়ে যায়। পরবর্তীতে প্রায় ১৫ মিনিট পর প্রতিবেশী রিপন ডাক চিৎকার করে বলতে থাকে, কে যেন মাটিতে পড়ে আছে।

এমন চিৎকার শুনে বোন জামাই মোহসিন ও সুমি নিচে গিয়ে ফয়সালকে উপুর হয়ে পড়ে থাকতে দেখে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়া গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ভর্তি করেন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে ফয়সাল মারা যায়।

সাদিয়া তাহসিনের পরিবারের লোকজন পলাতক থাকায় তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

অন্যদিকে, ফয়সাল খান শুভ প্রথম প্রেমিকা শর্মী (২৯) এর সাথে তিন বৎসরের প্রেমের সম্পর্ক থাকার পর পরবর্তীতে ফয়সাল সাদিয়ার সাথে প্রেম শুরু করে এবং সর্বশেষ চার বছরের মাথায় ফয়সালের মৃত্যু ঘটে। এ নিয়ে জনমনে রহস্যের ঘুরপাক খাচ্ছে। পুলিশ তদন্ত করলেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

জেলা গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে বাসায় গিয়েছি। আমরা বাসায় গেলে ফয়সালের বোন জামাই কেঁচি গেইট খুলে দিলে ভিতরে প্রবেশ করি। তাকে না পেয়ে আমরা বের হয়ে চলে এসেছি। সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পারেন, বের হওয়ার সময় পুলিশের কোন তাড়াহুুড়া ছিল না। ফয়সাল কিভাবে ছাঁদ থেকে পড়েছে নাকি অন্য কিছু বিষয়টি আমার জানা নেই।

কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম খান বলেন, ফয়সালের মরদেহ ঢাকায় ময়নাতদন্ত হয়েছে। এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা কি জানা যাবে। এর আগে কিছু বলা যাবে না।