সংবাদ শিরোনাম

চট্টগ্রামে চাঁন্দগাঁও আদালতের রায় অমান্য, জাল দলিল-খতিয়ান সৃজন করে জোরপূর্বক বাড়ী দখলের অভিযোগ।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ—চট্টগ্রামের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় জাল দলিল-খতিয়ান সৃজন করে জোরপূর্বক বাড়ী দখলের অভিযোগ করেছেন এক ব্যবসায়ী। উক্ত জাল-জালিয়াতির সাথে জড়িত রয়েছেন ভুক্তভোগীর আপন মা, ভাই, সিডিএ এবং রেজিস্ট্রি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী।

অনুসন্ধান এবং মামলাসূত্রে জানা যায়, সিডিএ মডেল আবাসিক এলাকার এ-ব্লকের ২ নম্বর রোডের এক্স-১৮ নম্বর বাড়ীর মালিক সিরাজুল হক ২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি ওয়ারিশ হিসেবে স্ত্রী খালেদা বেগম এবং ২ ছেলে মো. সাইফুল হক ও মুজিবুল হককে রেখে যান। আবাসিকের উক্ত ৪ কাঠার প্লটটি তিনি ১৯৯১ সালে খরিদাসূত্রে মালিক হন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে তদস্থিত ১ তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং নির্মাণে অর্থায়ন করেন তার বড় ছেলে মো. সাইফুল হক। সেই বিষয়টি বিবেচনা করে তিনি ২৬/১০/২০০৩ তারিখে প্রচলিত বিধিমতাবেক ৪ কাঠার প্লট এবং তদস্থিত স্থাপনাসহ বড় ছেলে মো. সাইফুল হকের নামে নোটারীমূলে হেবা করে দেন। সমপরিমাণ অর্থের জমি রাউজানের গ্রামের বাড়িতে ছোট ছেলে মুজিবুল হককেও বুঝিয়ে দেন। বড় ভাইকে শহরের প্লট হেবা করে দেয়ায় ছোট ভাইয়ের মধ্যে এক প্রকার ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সাইফুল হক হেবা দলিল সৃজনের পরে নিজের নামে বিএস নামজারী খতিয়ান সৃজন না করার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে, পিতার মৃত্যুর দীর্ঘদিন পর একটি কুচক্রী মহলের প্ররোচনায় ও লোভের বশবর্তী হয়ে হেবা দলিলের বিষয়টি গোপন রেখে ২৫/০৫/২০১৫ তারিখে মুজিব তার মা খালেদা বেগমকে বিভ্রান্ত করে তাদের উভয়ের অংশ দেখিয়ে উক্ত ৪ কাঠার প্লট থেকে গোপনে ২.২৫ কাঠা জমি আবুল হাশেম নামের এক প্রবাসী ব্যক্তির সাথে বায়নানামা দলিল সৃজন করে। উক্ত জমির মূল্য ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা নির্ধারণ করে বায়না দলিল সৃজনের সময় ৬০ লক্ষ টাকা বুঝে নেয়।

পরবর্তীতে সাইফুল হক ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত একটি চেকের মামলায় কারাগারে থাকাকালীন ১৪/০১/২০১৬ তারিখে অন্য একজন ব্যক্তিকে সাইফুল হক সাজিয়ে মুজিবুল হক এবং খালেদা বেগমসহ ৩ জনের নামে ওয়ারিশান সনদ সংক্রান্ত হলফনামা সৃজন করে। এই হলফনামায় নিজের জাল স্বাক্ষরকে চ্যালেঞ্জ করে উক্ত হলফনামা বাতিলের জন্য সাইফুল আদালতে মামলা করেন। আদালত স্বাক্ষর এক্সপার্ট করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সিআইডিকে নির্দেশ প্রদান করেন।

২৭/০৩/২০১৬ তারিখে সিডিএর কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে উক্ত প্লটের ২.২৫ কাঠা জমি হস্তান্তরের অনুমতিপত্র গ্রহণ করে। বিষয়টি জানতে পেরে সাইফুল হক ২০১৭ সালে ৫ম সি: সহকারী জজ আদালতে একটি বিভাগ মামলা দায়ের করেন এবং উক্ত প্লট ও রাউজানসহ সমস্ত পৈতৃক সম্পত্তির ক্রয়-বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রার্থনা করলে আদালত নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করেন। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চান্দগাঁও সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে মুজিবুল হক এবং খালেদা বেগম বায়নাকারী আবুল হাশেমের সাথে ৫/৪/২০১৭ তারিখে উক্ত প্লটের ২.২৫ কাঠা জমি রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করেন। ১৩/০৮/২০১৭ তারিখে আবুল হাশেম নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অজানা শক্তির মাধ্যমে তার নামে বিএস ১২৭৮৬ নম্বর খতিয়ান সৃজন করে। এই বিষয়ে অবগত হওয়ার পর সাইফুল হক উক্ত রেজিস্ট্রি দলিল বাতিলের জন্য ২০১৮ সালে ১ম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ১৪২/২০১৮ নম্বর মামলা দায়ের করেন, যেটি এখনো চলমান রয়েছে। এছাড়া আবুল হাশেমের নামে সৃজিত ২.২৫ কাঠার খতিয়ান বাতিলের জন্যও মিথ্যা মামলা দায়ের করেন সাইফুল।

বিল্ডিংয়ের একটি ফ্ল্যাটে সাইফুল নিজের পরিবার নিয়ে বসবাস করেন এবং অন্যটিতে ভাড়াটিয়া থাকতো। কিন্তু ১/৫/২০১৯ তারিখ সকাল ১০টার দিকে কিছু সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোকজন এবং চান্দগাঁও থানার এসআই কাজলের নেতৃত্বে একটি টিম বাড়ীতে ঢুকে ভাংচুর করে ভাড়াটিয়াদের জিনিসপত্র লুটপাট করে তাদেরকে বের করে দিয়ে ফ্ল্যাটটি দখলে নেয়। এই বিষয়ে সাইফুল চান্দগাঁও থানায় মামলা করতে গেলে ওসি উপরের নির্দেশে মামলা নেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেন। সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এসআই কাজলের নেতৃত্বে এই তান্ডবের বিষয়ে সাইফুল পুলিশ কমিশনারকে লিখিত অভিযোগ প্রদান করলে সত্যতা নিশ্চিত করে এসআই কাজলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয় এবং মামলার রায়ে এসআই কাজলকে চাকুরীচ্যুত করা হয়। কিন্তু তখন থেকে ফ্ল্যাটটি আবুল হাশেমের লোকজন দখল করে রেখেছে।

গত ১৩/০৮/২০২২ তারিখে সাইফুল হক যেই ফ্ল্যাটে বসবাস করে সেটাও দখলে নেওয়ার জন্য আবুল হাশেমের নির্দেশে একদল সন্ত্রাসী হামলা চালায়। হামলায় জিনিসপত্র ভাংচুর এবং সাইফুলের স্ত্রী-সন্তান আহত হয়। এই ঘটনায় চান্দগাঁও থানায় মামলা দায়ের করার পর আসামিপক্ষ আরো ক্ষিপ্ত হয়ে সাইফুলের বৃদ্ধ শ্বশুরসহ নিরপরাধ লোকদের আসামি করে উল্টো তাদের উপর হামলার দাবী করে একটি সাজানো মামলা দায়ের করেন।

সাইফুল হক বলেন, তিনি একজন ব্যবসায়ী, নগরীর আন্দরকিল্লায় তার একটি লাইব্রেরি আছে। সারাদিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যস্ত সময় কাটে। কিন্তু আবুল হাশেমের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের ভয়ে পরিবার নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় দিন কাটে। আবুল হাশেমের বাড়ী বোয়ালখালী হলেও তিনি জাতীয় পরিচয়পত্রে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করেছেন নগরীর বাকলিয়া থানা এলাকায়। বিভিন্ন অপকর্মের দায়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা থাকায় তিনি স্ব পরিবারে বিদেশে থাকেন। কিন্তু তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা কিছুদিন পরপর মামলা প্রত্যাহার না করলে তার ফ্ল্যাট দখলসহ অপূরণীয় ক্ষতির হুমকি দিয়ে যায়। ৫-৬টি মামলা নিয়ে আদালতে দৌড়াদৌড়ির কারণে অনেকটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। তিনি আরো বলেন, গ্যাস সংযোগ তার নামে। কিন্তু অভিযোগ অমান্য করে বিদ্যুৎ অফিসের দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা আবুল হাশেমের নামে বিদ্যুৎ মিটার প্রদান করেছেন। এখন ওয়াসার সংযোগ নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি অবগত করার পরেও ওয়াসার কতিপয় কর্মকর্তা তার নামে সংযোগ দেওয়ার জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করতেছে। আবুল হাশেমের নামে ওয়াসার সংযোগ না দেওয়ার কথা বলায় ওয়াসার কয়েকজন কর্মকর্তা তাকে ধমক দিয়ে অফিস থেকে বের করে দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

সাইফুলের স্ত্রী বলেন, আবুল হাশেমের পক্ষের দখলকৃত ফ্ল্যাটে থাকা দখলদার লোকজনের ভয়ে আত্মীয়স্বজনরাও তাদের বাসায় আসতে পারে না। তারা সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে হুমকি দিয়ে বলেছিলো সাইফুলের বাসায় যারা আসবে তাদেরকে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে। যেকোনো সময় সেই ফ্ল্যাটটিও দখলে নিয়ে সেটা রেজিস্ট্রি প্রদানে সাইফুলকে বাধ্য করা হবে। তিনি আরো বলেন, প্রতিটি দিন কাটে অজানা শঙ্কায়। ফ্ল্যাটে আবুল হাশেমের পক্ষে যারা বসবাস করেন তাদের পরিচয় নিশ্চিত এবং নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

আবুল হাশেমের দখলকৃত ফ্ল্যাটের দরজা নক করে সাক্ষাৎকার নেওয়ার কথা বললে ভেতর থেকে একজন মহিলা নিজেকে বোয়ালখালী থানাধীন খরনদ্বীপ এলাকার মফিজুল হক মেম্বার বাড়ির প্রবাসী দিদারুল আলমের স্ত্রী এবং আবুল হাশেমের শ্যালিকা বলে পরিচয় দিয়ে সাক্ষাৎকার প্রদানে অনীহা প্রকাশ করেন। সেই ফ্ল্যাটে বিভিন্ন লোকজন অবস্থান নিয়ে সাইফুলের পরিবারকে ভয়ভীতি দেখানো প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি সেটারও সত্যতা নেই বলে জানান।

একই প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে আবুল হাশেমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। কোনো সাড়া না দেওয়ায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*