রাঙামাটির কাউখালীতে সিসিডিআর’র পরিচালক ও তিন কর্মকর্তার কারাদন্ড ও অর্থদন্ড

জাহাঙ্গীর, রাঙ্গামাটি জেলা প্রতিনিধি—বৃহষ্পতিবার (১৩-০২-২৫) রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার মিনি মার্কেট এলাকায় ব্রাঞ্চ শাখার অফিস ও ঘাগড়া বাজারের প্রায় ৯শত জন গ্রাহকের এনজিওতে জমানো সঞ্চয় ১ কোটি ৫০লক্ষ টাকার আত্মসাৎ ও প্রতারণার মামলায় সেন্টার ফর কমিউনিটি ডেভেলাপমেন্ট এন্ড রিসার্চ (সিসিডিআর) এর এক্সকিউটিভ ডিরেক্টর এন্ড চীফ এক্সকিউটিভ ডিরেক্টর জাহিদুল আলম কে সর্বমোট ৮(আট)বছর কারাদন্ড দিয়েছে রাঙামাটি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট(২য়), বিচারক ইশরাত জাহান পুনমের আদালত।

মামলায় রাষ্ট্র পক্ষে সন্দেহাতীতভাবে উক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় ১নং আসামী জাহিদুল আলমকে ১৮৬০ সনের দন্ডবিধির ৪০৬ ধারায় দোষীসাব্যস্ত করে ৩ বছর, ৪২০ ধারায় ৫ বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং ১০,০০০/-(দশ হাজার) টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেছে আদালত। একই সাথে সেন্টার ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট এন্ড রিসার্চ (সিসিডিআর) এর সিনিয়র অডিট অফিসার মোঃ জালাল উদ্দিন ও ব্রাঞ্চ ম্যানেজার লিটন চাকমা (৩০) ও কামনা চাকমা কে দোষী সাব্যস্ত করে পৃথক পৃথক ভাবে ১৮৬০ সনের দন্ডবিধির ৪২০ ধারায় ৫ বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং ৫০০০/-(পাচ হাজার) টাকা অর্থদন্ড প্রদান করা হয়।

কাউখালী উপজেলা থানায় দায়েকৃত জিআর -২১৩/১৭ মামলায় গত বুধবার রাঙামাটি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (২য়) আদালতের বিচারক ইশরাত জাহান পুনম এই রায় দেন। এসময় আসামী পক্ষের আইনজীবী এড মোখতার আহমদ, এড হারুনর রশীদ,এড. বিপ্লব চাকমা এবং এড. তন্ময় দে বাপ্পা উপস্থিত ছিলেন। তারা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন আসামীরা ন্যায়বিচার পান নি, তারা উচ্চ আদালতে উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করবেন।

মামলার সূত্রে জানা যায়, কাউখালি থানার ঘাগড়া এলাকার ৮০০/৯০০ লোকের ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা প্রতারনার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন সিসিডিআর। ভুক্তভুগি গ্রাহকের পক্ষে মাঈনউদ্দিন বাদী হয়ে বিগত ০৬/০৬/২০১৭ ইং তারিখে উক্ত প্রতিষ্ঠানের পরিচালক জাহিদুল আলম, জালাল উদ্দিন, লিটন চাকমা ও কামনা চাকমা কে আসামী করে কাউখালি থানায় একটি এজাহার দায়ের করা হয়। কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ দীর্ঘ তদন্ত শেষে বিজ্ঞ আদালতে ১৮৬০ সনের দন্ডবিধির ৪০৬/৪০৭/৪২০ ধারা অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অতপর উক্ত চার্জশিটের আলোকে বিজ্ঞ আদালত ১৮৬০ সনের দন্ডবিধির ৪০৬/৪২০ ধারায় অভিযোগ গঠন করেন। বিচারিক আদালতে রাষ্ট্র পক্ষে সন্দেহাতীতভাবে উক্ত অভিযোগ প্রমাণ করার লক্ষ্যে সর্বমোট ৩০ জন সাক্ষী বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করেন। আসামী পক্ষে সকল সাক্ষীকে আইনের বিধানমতে জেরা করা হয় এবং সকল সাক্ষীদের বক্তব্য তাদের পড়ে শুনানো হয়। ১নং আসামী জাহিদুল আলম, মামলার শুরু থেকে পলাতক রয়েছেন।

রায়ে রাষ্ট্রপক্ষে বিজ্ঞ সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর রাইসুল কবির সন্তোষ প্রকাশ করে জানান, যুগান্তকারী এই রায়ের মাধ্যমে রাঙামাটি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার আরেকটি মাইলফলক সৃষ্টি হলো।

ঘটনা সূত্রে যানা যায়- ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রাঙ্গামাটির সাইনবোর্ড সর্বস্ব এনজিও সেন্টার ফর কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট এন্ড রিসার্স (সিসিডিআর)’র নির্বাহী পরিচালকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে। রাঙ্গামাটির স্বর্ণটিলা এলাকায় অবস্থিত স্থানীয় এনজিও সেন্টার ফর কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট এন্ড রিসার্স (সিসিডিআর)। যার নির্বাহী পরিচালক মোঃ জাহেদুল ইসলাম নামে ওখানকারই এক ব্যক্তি। ২০১২ সালে জানুয়ারীতে ব্যাপক প্রচারনা চালিয়ে লোক নিয়োগের মাধ্যমে কাউখালী উপজেলার কচুখালীতে শাখা অফিস চালু করে। একই বছরে পাশ্ববর্তী রাঙ্গুনীয়া উপজেলার রানীরহাট বাজার ও গোচরা চমৌহনী বাজারে আরো দুটি শাখা খোলে।

গত ৭ বছরে তিন শাখার প্রায় দুই হাজারেরও বেশী গ্রাহক সৃষ্টি করেছে সংস্থাটি। ৫ বছর মেয়াদে দৈনিক ২০-২০০ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় আদায়ের মাধ্যমে তিন শাখার উল্লেখিত গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে প্রায় চার কোটি টাকা। এর মধ্যে কেবল কাউখালী ব্রাঞ্চই রয়েছে ৯৮০ জন গ্রাহক। যাদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করা হয়েছে ২ কোটি টাকার বেশী।