ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা কাজী নজরুল ইসলাম হাই স্কুলের বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক রিয়াজ উদ্দিনের ব্যপক অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য অবশেষে প্রকাশ পেয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যপক সমালোচনার ঝড় বইছে।
সূত্র মতে, কাজী নজরুল ইসলাম হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রিয়াজ উদ্দিন স্কুলে কর্মরত থাকা অবস্থায় সাবেক আওয়ামীলীগ সরকারের প্রভাব খাটিয়ে, স্থানীয় মন্ত্রী কে.এম খালিদ এর প্রভাব দেখিয়ে এবং মুক্তাগাছা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেনের আত্মীয়ের পরিচয় দিয়ে ধরা কে সরাজ্ঞান করে ব্যপক অনিয়ম দূর্নীতি নিরপরাধ মানুষকে বিভিন্ন ধরনের হয়রানী সহ এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর মুক্তাগাছার সকল নেতাকর্মী গা ডাকা দেওয়ার পর তিনিও গা ডাকা দেন। সূত্র মতে, প্রধান শিক্ষক রিয়াজ উদ্দিন শিক্ষকতা পেশার পূর্বে তিনি মুক্তাগাছা কৃষি ব্যাংকে দালালি করতেন। পরবর্তীতে ঢাকার রূপগঞ্জে একটি হাই স্কুলের সহকারি শিক্ষক পদে চাকুরী নেন। এরপর ১৩/১৪ বছর পর কাজী নজরুল ইসলাম হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদ শূণ্য হওয়ায় বিজ্ঞপ্তি পেয়ে আবেদন করেন। স্থানীয় মন্ত্রী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন সরকার তার আত্মীয় এবং তিনি একজন আওয়ামীলীগ কর্মী হিসাবে প্রভাব খাটিয়ে প্রধান শিক্ষক হন। তারপর থেকেই তিনি বীরর্দপে সকল অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে চলতে থাকেন। স্কুলে ৩/৪ জন কর্মচারী নিয়োগে ২০ লক্ষ টাকা নিয়ে নিয়োগ দেন বলে এলাকায় চাউর রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া স্কুলের ৪৭টি বৃহৎ আকারের বৃক্ষের ৫০০ সিএফটি কাঠ বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করেন।
এ ব্যাপারে তৎকালীন সভাপতি প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করলে তদন্ত হয়। তদন্তে প্রধান শিক্ষক রিয়াজের বিরুদ্ধে আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। তদন্ত কর্তৃপক্ষ স্মারক নং-৩১.৪৫.৬১৬৫.০০০.৫০.০০১.২০-৮২১, তারিখ-২৯/০৯/২০০০ ইং চিঠি মূলে প্রধান শিক্ষক রিয়াজের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও ফৌজদারী মামলা করার সুপারিশ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মামলা হতে দেননি। অন্যদিকে স্কুলের মাঠ ভরাটের জন্য ১২ টন টিআর বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিষয়টি গোপন রেখে তিনি সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাত করেন। ২০২০ সাল থেকে ২১ মে ২০২৪ পর্যন্ত স্কুলের কোন আয়-ব্যয় সংরক্ষণ না করে সমুদয় টাকা নিজের কাছে রেখে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন। স্কুলে শিক্ষা প্রকৌশল থেকে ৪ তলা ভবন অনুমোদন আনার জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা নিয়ে আত্মসাত করেন। মসজিদ নির্মাণের কথা বলে ৫ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেন। জনৈক মোকছেদ আলী নামে এক ব্যক্তির স্বাক্ষর জাল করে ১৩ লক্ষ টাকা দাবী করে তার বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা মামলা দেয়। পরবর্তীতে স্বাক্ষরটি সিআইডির মাধ্যমে তদন্ত করে ভুয়া হিসাবে প্রমান হয় বলে সূত্র প্রকাশ। অবশেষে গত ১৯ মে ২০২৪ ইং তারিখে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি তার সকল অপকর্ম খোজ পেয়ে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এসব তথ্য স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদ্য সাবেক সভাপতি আবু সাঈদ সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। তিনি জানান সাবেক প্রধান শিক্ষক রিয়াজ উদ্দিন তার প্রভাব এতই ছিল যে, এলাকায় উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন সরকারের আত্মীয় পরিচয়ে এলাকার মানুষদের জিম্মি করে রাখতো। কোন কিছু হলেই পুলিশ খবর দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করতো।
এদিকে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। কিছু দিন জেলা খাটার পর জামিনে বেরিয়ে এসে নিজে ভালো মানুষ সাজার জন্য স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কল্পিত কিছু তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে প্রধান শিক্ষক জানান। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আরো জানান, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী সাবেক প্রধান শিক্ষক রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে স্কুলের ৪৭টি বৃক্ষ চুরির অভিযোগে মামলার প্রস্তুতি চলছে।