মুক্তাগাছায় নারী লোভী প্রতারক রুবেল ধর্ষণ মামলায় জেলে

ময়মনসিংহ থেকে সিরাজুল হক সরকার: অবশেষে ভন্ড প্রতারক নারী লোভী রুবেল র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে। গ্রেফতারি পরওয়ানা থাকা সত্বেও থানা পুলিশ ধরছিলনা এই প্রতারককে। পরে বাদীনি অসহায় লাকি আক্তার র‌্যাবের কাছে ধর্ষক রুবেলের গ্রেফতারের আকুতি জানালে গত ০৬/০৪/২০২৫ ইং তারিখ র‌্যাবের একটি দল ময়মনসিংহ শহর থেকে তাকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায়।

নারী লোভী প্রতারক রুবেল প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অনেক নারীরই সর্বনাশ করেছে। এমন এক অসহায় নারীকে ময়মনসিংহ শহরে একটি বাসা বাড়িতে আটক রেখে ভুয়া কাবিন দেখিয়ে প্রকৃত বিয়ের নামে ধর্ষণ করে। কাবিন ও বিয়ের বিষয়ে অস্বীকার করেও শেষ রক্ষা হয়নি রুকনুজ্জামান রুবেলের। ঘটনার সূত্রপাত ২০২২ সালে। ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার বড়গ্রাম ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত আঃ সবুরের কন্যা লাকি আক্তার স্বামী পরিত্যাক্তা হয়ে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে পিত্রালয়ে চলে আসে। পিত্রালয়ে আসার পর ঢাকা উত্তরার একটি বাইং হাউজে চাকুরী নেন। ছয় মাস চাকুরী করার পর পরশী বাড়ীর রুকুনুজ্জামান রুবেল বায়িং হাউজের মালিককে মোবাইল ফোনে জানান লাকি আক্তারে পুত্র গুরুত্বর অসুস্থ। তাকে অসুখের কথা না বলে জরুরী ভিত্তিতে বাড়িতে পাঠানোর কথা বলেন। মালিক রুবেলের কথা বিশ^াস করে কিছু টাকা দিয়ে লাকিকে বাড়িতে পাঠায়। লাকি ময়মনসিংহ বাইপাসে বাস থেকে নামার পর পূর্ব থেকে পরিকল্পিতভাবে বসে থাকা রুবেলের সাথে দেখা হয়। রুবেল তাকে কৌশলে পূর্ব থেকে ভাড়া করা বাড়িতে উঠায়। এবং ভয় ভীতি দেখিয়ে কথিত মৌলভী এনে বিয়ে পড়ায়। ১৫ দিন পর ৩ লাখ টাকার একটি ভুয়া কাবিন দেয় এবং কৌশলে কাবিনের কাগজটি ছিড়ে ফেলে। লাকি আক্তার শেষে বাধ্য হয়েই রুবেলে বাড়িতে গিয়ে উঠে। তার পরিবারের লোকজন তাকে মারধর করে। তিন দিন সেখানে থাকার পর কয়েকশ লোকের উপস্থিতিতে শালিস হয়। শালিসে রুবেলের কোন লোকজন উপস্থিত হয়নি। পরে শালিসের লোকজনের কথামতো লাকি আক্তার ১৬/০২/২০২২ রুবেলের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালী থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেন। পুলিশ মেডিকেল করায় মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণ হয়েছে আলামত পায়নি উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে পুলিশ সুপারের নির্দেশে ভিক্টিমের কাপড় যব্দ করে ফরেনসিক রিপোর্টে আলামাত পাওয়া যায়। ২৩ আগষ্ট ২০২২ আসামী রুবেলের ডিএনএ করার পর তাতে মিল পাওয়া যায়। পরবর্তীতে রুবেল নিজে বাঁচার জন্য ২০ লক্ষ টাকার একটি ভুয়া কাবিন দেখিয়ে মামলা উঠানোর কথা বলে। পরবর্তীতে রুবেল ২০ লক্ষ টাকা কাবিনের বিষয়টি অস্বীকার করে। এদিকে রুবেলর বড় ভাই দেলোয়ার হোসেন ওরফে হারুন মাস্টার রুবেলের স্ত্রী ফেরদৌসী আক্তার শিল্পী কে ভিক্টিম সাজিয়ে হাইকোর্টে নিয়ে মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ভিক্টিম লাকি সাজিয়ে একটি মিথ্যা আপোষের কথা বলে। এতে হাইকোর্ট জামিন দেন। উক্ত জামিন মূলে হাজত থেকে বের হয় রুবেল। ধর্ষণ মামলা থেকে বাচার জন্য পুনরায় ৩ লক্ষ টাকার একটি কাবিন কোর্টে দেখায়। এবং কোর্টে স্বীকারোক্তি দেয় যে লাকি তার স্ত্রী ও সন্তান তার নিজের। রুবেলের স্বীকারোক্তি দেওয়ার বিজ্ঞ আদালত মামলা শেষ না করে চার মাস সংসার করার অনুমতি দিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখেন। এদিকে প্রতারক রুবেল ২০২৩ সনের ৩ সেপ্টেম্বর লাকি ও তার মা, চাচা, ভাইসহ পাঁচ জনের নামে একটি মিথ্যা মামলা করে রেখেছিল। বিজ্ঞ আদালত থেকে চার মাসের অবজারভেসনের সময় রুবেল কৌশলে সিআইডি পুলিশ দিয়ে পূর্বের মামলা তদন্ত করায়। সিআইডি পুলিশ লাকির কাছে গিয়ে আপোষ নামার কপি চায়। আপোষ নামার কপি দেওয়ার পর ৩ লক্ষ টাকার কাবিন তার মধ্যে দেড় লক্ষ টাকা আদায় মূলে একটি কাবিন দেখায়। কাবিনের কপি চাইলে মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কপি দিবেনা বলে রুবেল জানায়। ১০ ফেব্রæয়ারী ২০২৫ ইং তারিখ মামলার সম্পূর্ণ ঘটনা লাকি আদালতে অবহিত করে। বিজ্ঞ আদালত লাকির বক্তব্য শুনার পর রুবেলের জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। ঐ দিন ২০২৩ সালের মামলায় রুবেল পুলিশ দিয়ে ময়মনসিংহ থেকে তাকে গ্রেফতার করায় এবং তার কুলের ১৪ মাসের বাচ্চা ছিনিয়ে নেয়। সে সময় রুবেলের ভাই দেলোয়ার হোসেন ও হারুন মাষ্টার সহ অজ্ঞাত আরো ২/৩ জন সাথে ছিল। সেই সাথে মা, চাচাকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায়। পরদি লাকি জামিনে বেরিয়ে আসে। এদিকে গ্রেফতারি পারোয়ানার পরও পুলিশ তাকে গ্রেফতার না করায় লাকি আক্তার ময়মনসিংহ র‌্যাব-১৪ কে রুবেলকে গ্রেফতারের আকুতি জানালে র‌্যাবের একটি দল ০৬/০৪/২০২৫ ময়মনসিংহ শহর থেকে গ্রেফতার জেল হাজতে পাঠায়। এদিকে, দেলোয়ার হোসেন ওরফে হারুন মাষ্টার এর কাছে হাইকোর্টে গিয়ে প্রতারণামূলক ভাবে শিল্পীকে ভিক্টিম সাজানোর বিষয় জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান, হাইকোর্টে তিনি জাননি। শিল্পী তার ভাই সুহেলকে নিয়ে হাইকোর্টে গিয়ে জামিন এনেছিল।