রূপান্তর বাংলা নিজস্ব সংবাদদাতা —-চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা ইনামুল হাছানের বিরুদ্ধে উঠে এসেছে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ। ৩৫তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের এই কর্মকর্তা তার কর্মজীবনের প্রায় পুরোটাই কাটিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ফ্যাসিস্ট আমলের আওয়ামী লীগের একজন ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং এখনো তাদের ছত্রছায়াতেই বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন।
জানা গেছে, ইউএনও ইনামুল হাছানের কার্যালয় এখনও আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ ঘোষিত নেতাদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। উপজেলা ক্রীড়া কমিটিতে জুলাই বিপ্লব মামলার এজাহারভুক্ত এক আসামিকে সদস্য করা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির অনুমোদন না দিয়ে নিজেই পদ দখল করে রাখাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
একাধিক প্রধান শিক্ষক জানান, সরকারি বৃত্তি প্রদানে ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা আদায় এবং খেলাধুলার বাজেট থাকা সত্ত্বেও স্কুল-মাদ্রাসা থেকে জোর করে অর্থ সংগ্রহ করে তা ইউএনও অফিসের নামে ব্যবহার করা হচ্ছে। একজন শিক্ষক জানান, গতবার যেখানে ৫০০ টাকা চাওয়া হয়েছিল, এবার প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২০০০ টাকা আদায় করা হয়েছে।
সরকারি খাস জমিতে অবৈধ দোকানপাট গড়ে উঠলেও সেগুলো উচ্ছেদে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে বরং নিয়মিত চাঁদা গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে ইউএনওর বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা প্রশাসনের এক স্টাফ জানান, “I Love Bangladesh” নামক একটি সাইনবোর্ড তৈরির নামে ১০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ফুলের চারাগাছ রোপণ, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সংস্কারের নামে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার সরকারি বাজেট আত্মসাৎ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বাজার ইজারা ও চাঁদাবাজির অভিযোগও উঠেছে ইউএনওর বিরুদ্ধে। ব্যবসায়ীরা জানায়, আগে যেখানে ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা ২০-৩০ টাকা দিতেন, এখন সেই অংক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত। এই অর্থের একটি বড় অংশ ইউএনও’র পৃষ্ঠপোষকতায় চাঁদাবাজ চক্র ভাগ করে নিচ্ছে বলে অভিযোগ।
মাটি কাটা ও পরিবহনের ক্ষেত্রেও ইউএনও’র অফিসের নামে দৈনিক চাঁদা আদায়ের চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি স্পটে মাটি কাটার অনুমতির নামে নেওয়া হচ্ছে ৬০০০ টাকা করে, যার বড় অংশ যায় ইউএনও’র পকেটে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইনামুল হাছান বলেন, “এটি একটি মহলের ষড়যন্ত্র। আমি এসব অভিযোগ অস্বীকার করছি।” তবে ভুক্তভোগীরা মনে করেন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সুষ্ঠু তদন্ত পরিচালনা করলে সত্য বেরিয়ে আসবে।
তারা দ্রুত এই কর্মকর্তার অপসারণ এবং লোহাগাড়া উপজেলা প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার দাবি জানান।