সরল বিশ্বাসে কৃতকর্ম বনাম গণদুর্নীতি: সীমাহীন দায়মুক্তির প্রশ্নে কিছু কথা

রুপান্তর বাংলা ডেক্স- সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে একটি বহুল ব্যবহৃত দায়মুক্তির ধারা হলো— “সরল বিশ্বাসে কৃতকর্মের জন্য তাদের বিরুদ্ধে মামলা বা বিচার হওয়া যাবে না।” প্রশাসনিক কাজের স্বার্থে এটি একটি আইনগত সুরক্ষা, সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ‘সরল বিশ্বাস’ কতদূর গড়াবে? এর সীমারেখা কোথায়?

আমাদের দেশে প্রতিটি ভূমি জরিপের পর লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষ চরম হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হন। রেকর্ড সংশোধনের নামে বছরের পর বছর মামলা-মোকদ্দমা চলতে থাকে। জরিপ শুরু হওয়া মাত্রই অনেক এলাকায় এক ধরনের জনমত তৈরি হয়ে গেছে— “জমি জরিপ মানেই গরিব হওয়ার সূচনা।” কারণ, জমি থাকা না থাকা নির্ভর করে যাচ্ছে কার নামে রেকর্ড হলো তার উপর। টাকা, ক্ষমতা আর প্রভাব খাটিয়ে অন্যের জমি নিজের নামে রেকর্ড করিয়ে নেওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। অথচ এসব কাজের দায় থেকে জরিপ কর্মচারীরা মুক্তি পেয়ে যান এই ‘সরল বিশ্বাসের’ ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়ে।

জরিপে ভুল হওয়াটাই যদি নিয়মে পরিণত হয়, তবে সেটি কি আসলেই ‘ভুল’ থাকে? না কি সেটি একটি কাঠামোবদ্ধ অনিয়ম বা দুর্নীতির অংশ? কাজের অদক্ষতা আর ভুল বলে দায় এড়িয়ে যাওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত? প্রতিটি জরিপে শতকরা কত ভাগ ভুল স্বাভাবিক ধরে নেওয়া হবে— তার কি কোনো নির্ধারিত সীমা নেই?

একইভাবে, বিচার বিভাগের ক্ষেত্রেও প্রশ্ন থেকে যায়। যদি কোনো বিচারকের ৫০ শতাংশ রায় আপীল বা পুনর্বিচারে উল্টে যায়, তবে সেই বিচারক আদৌ কতটা দক্ষ? আবার যদি একই ভুলের কারণে একাধিক মানুষের জমি অন্যের নামে চলে যায়, তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কেন জবাবদিহির আওতায় আনা হবে না?

সরল বিশ্বাসে কাজ করার ধারা যদি অবারিত দায়মুক্তির হাতিয়ার হয়ে ওঠে, তবে সেটা আইনের অপব্যবহার নয় কি? তাহলে তো ‘গণদুর্নীতি’ও ‘সরল বিশ্বাসে’ চালানো সম্ভব হয়ে যাবে!

এখানে দরকার স্পষ্ট নীতিমালা, নির্ধারিত ভুলের সীমা, দায় নিরূপণের একটি কাঠামো এবং প্রতিটি স্তরে কার্যকর জবাবদিহি। নচেৎ সরল বিশ্বাসের আড়ালে দুর্নীতি ও অযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা পাবে—যা রাষ্ট্র ও জনগণের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
মোঃ জুনাইদ
সিনিয়র সহকারী জজ,সুনামগঞ্জ ও
সাবেক জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা