স্টাফ রিপোর্টার রাঙ্গামাটি—পর্যটন নগরী রাঙামাটিতে আগন্তুক এক রহস্যময় নারীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।
রোববার (২৮ জুলাই) দিবাগত রাত আড়াইটার সময় রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজারের আবাসিক হোটেল গোল্ডেন হিল থেকে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে কোতয়ালী থানা পুলিশ। এসময় নারীর পরনে জিন্সের প্যান্ট ও শরীরে শার্ট পরানো অবস্থায় খাটে অর্ধশোয়া ছিলো।
হোটেলটি রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মূছা মাতুব্বরদের তিন ভাইয়ের মালিকানাধীন হলে সেটি কন্ট্রাকে নিয়ে চালাতেন জনৈক কুতুব উদ্দিন।
এই ঘটনায় প্রাথমিকভাবে হোটেলটির ম্যানেজার কাম পরিচালক কুতুব উদ্দিনকে আটক করে পুলিশী হেফাজতে নিয়েছেন বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সাহেদ উদ্দিন।
আটককৃত ম্যানেজার কুতুব উদ্দিন জানিয়েছেন, গত ২৬শে জুলাই উক্ত নারী রাঙামাটিতে এসে তার হোটেলে উঠেন। কি কারনে তিনি রাঙামাটিতে এসেছেন সেই বিষয়ে রেজিষ্ট্রারে সুনির্দিষ্ট কোনো কিছুর উল্লেখ ছিল না।
ম্যানেজার জানায়, রোববার দিবাগত রাত সাড়ে নয়টার দিকে উক্ত নারী হোটেলটির ৫ নাম্বার রুমের ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে তিনি দরজা ভেঙ্গে উক্ত নারীকে গলায় গামছা পেছানো অবস্থায় ফ্যান থেকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে খাটের উপর নামিয়ে নেন। পরবর্তীতে তিনি হোটেলটির মালিকপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করলেও রাত দেড়টার পরে কোতয়ালী থানা পুলিশকে বিষয়টি জানান। ঘটনার পরপরই কেন পুলিশকে জানাননি; প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা পর কেন জানালেন? এমন প্রশ্নের কোনো সুদুত্তর দিতে পারেননি ম্যানেজার কুতুব উদ্দিন। তার কথাবার্তায় সংশ্লিষ্ট্য সকলের মাঝে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।
এদিকে, হোটেলটি রেজিষ্ট্রার বইয়ে উক্ত নারীর নাম মিসেস মুন্না সরকার এবং ঠিকানা ঢাকার ধানমন্ডি উল্লেখ থাকলেও মৃত্যুর খবর পেয়ে চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটিতে আসা উক্ত নারীর স্বামী পরিচয়দানকারি আব্দুল কাদের ও কন্যা সাদিয়া আক্তার বৃষ্টি ও মা মমতাজ বেগম সকলেই উক্ত নারীকে তাদের স্বজন এবং তার প্রকৃত নাম মুন্না আক্তার এবং তিনি চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন।
মুন্নী আক্তারের পরিবারের সদস্যরা জানায়, তিনি কি কাজ করতেন সেটি তারা জানতেন না। তবে এরআগেও তিনি রাঙামাটিতে অন্তত তিনবার এসেছিলেন এবং এই গোল্ডেন হিলেই উঠতেন। কুতুব উদ্দিনের সাথে তার বন্ধুত্ব ছিলো এটা তারা সকলেই জানতেন।
এদিকে, মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় গিয়ে হোটেল গোল্ডেন হিলে তল্লাসী চালিয়ে ১২ নাম্বার রুম থেকে পতিতাসহ এক খদ্দেরকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃত খদ্দের ব্যক্তি পুলিশকে তাৎক্ষনিকভাবে জানায়, হোটেলটির ম্যানেজার কুতুব উদ্দিন তিন হাজার টাকার বিনিময়ে পতিতা সরবরাহ করেছেন। কুতুব উদ্দিন বিষয়টি স্বীকার করে জানান, আমাকে পুরাতন বাসষ্ট্যান্ডের জনৈক বোটওয়ালা পতিতা সাপ্লাই দেয়।
এদিকে, আবাসিক হোটেলে আগন্তুক ব্যক্তি রুম ভাড়া নেওয়ার সময় তার ভোটার আইডি কার্ডের তথ্যানুসারে রেজিষ্ট্রারে লিপিবদ্ধ করার নিয়ম থাকলেও উক্ত নারীর বেলায় সেটি অনুসরণ করা হয়নি এবং প্রতিদিন থানা পুলিশের কাছে রেজিষ্ট্রার খাতা প্রদর্শনপূর্বক সিল মেরে নিয়ে আসার কথা থাকলেও উক্ত হোটেলের রেজিষ্ট্রার প্রতি সপ্তাহে একবার নিয়ে যাওয়া হয় এবং এটি আবাসিক হোটেল মালিক কর্তৃপক্ষ করে বলে জানিয়েছেন আটককৃত ম্যানেজার কুতুব উদ্দিন।
এদিকে, পুলিশ সুত্র, স্থানীয় এলাকাবাসি ও দোকানদাররা জানিয়েছে উক্ত গোল্ডেন হিল আবাসিক হোটেলটিতে দীর্ঘদিন ধরেই পতিতা ব্যবসা করে আসছিলো কুতুব উদ্দিন। মার্কেটের ভিতর সিসি ক্যামেরা বেষ্টিত হওয়ায় প্রশাসনের লোকজন উক্ত হোটেলে অভিযানে গেলে আগে থেকেই ক্যামেরায় দেখে পতিতাদেরকে নীচ দিয়ে সরিয়ে দিতো কুতুব উদ্দিন। সর্বশেষ রহস্যময় নারীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তে গিয়ে উক্ত হোটেল থেকে পতিতাসহ খদ্দের আটকের ঘটনায় স্থানীয়দের অভিযোগের সত্যতা পেলো পুলিশ।
কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সাহেদ উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে জানিয়েছেন, আমরা প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণের পাশাপাশি মরদেহের ময়না তদন্তের ব্যবস্থা করছি।