ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ঢাকা ও ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষা অফিসার ও মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট রুলনিশি জারী। রুলে আগামী ২৭/০৮/২০২৫ ইং তারিখের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সূত্রমতে, ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা পদুরবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে সাবেক মন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে চেক জালিয়াতীর মাধ্যমে স্কুলের অর্থ আত্মসাৎ, বিনা অনুমতিতে কর্তব্যকাজে অনুপস্থিত, কতর্ব্যে অবহেলা, অদক্ষতা, দূর্নীতি, আয়-ব্যয় হিসাব প্রদর্শন না করা, কমিটির সিদ্ধান্ত অবজ্ঞা করা ও বিদ্যালয়ের আর্থিক প্রশাসনিক অনিয়ম করা সহ বিধি বহির্ভূত কাজ করার অপরাধে ম্যানেজিং কমিটি গত ১৯/০১/২০২০ ইং তারিখে সাময়িক বরখাস্ত করেন। পরবর্তীতে কমিটির বিধি অনুযায়ী বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আছমা বেগমকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন। দায়িত্ব দেওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্কুলের শিক্ষক কর্মচারীর দুই মাসের বেতন উত্তোলনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করলেও সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর ইশারায় বেতন বন্ধ রাখা হয়। সাবেক মন্ত্রীর ইশারায়ই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান আইন অমান্য করে যাচ্ছিলেন বলে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সহ অন্যান্য সদস্যরা অভিযোগ করেন।
প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান তার কুকর্ম থেকে রেহাই পেতে সুকৌশলে বিষয়টি ধামা চাপা দেওয়ার জন্য ম্যানেজিং কমিটি ভাঙ্গার জন্য পূর্বের তারিখ দেখিয়ে (২৮/১২/২০১৯) তারিখ দিয়ে রেজুলেশন দেখিয়ে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবরে আবেদন করেন। আবেদনটি কার্যকর করার জন্য সুচতুর মিজানুর রহমান মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করে। মামলা নং-৫৭৬/২০২০, তারিখ-০৫/০২/২০২০ ইং। ৪ অক্টোবর ২০২০ পর্যন্ত দুই বার শোনানী করেন কিন্তু কোন ফল হয়নি। এখানে ব্যর্থ হয়ে পরবর্তীতে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে লিভ-টু আপিল করেন যাহার নং-৪৯/২০২০। কিন্তু বিধিবাম মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট লিভ-টু আপিল টি নো অর্ডার দ্বারা নিস্পত্তি করেন। যার ফলে সাময়িক বরখাস্তটি আইনীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে মিজানুর রহমান আওয়ামী রাজনীতির প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন অফিসে প্রভাব বিস্তার করে। বেআইনী ও বিধিবর্হির্ভূতভাবে স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনা করে যান। ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মীর আব্দুল্লাহ আল আওয়াল ২৬/০৪/২০২৩ ইং তারিখ বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে সাময়িক বরখাস্ত বাস্তবায়নের জন্য আবেদন করে। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য সাবেক সভাপতি মোঃ আব্দুল্লাহ আল আওয়াল মহামান্য হাই কোর্ট ডিভিশনে রিটি পিটিশন করেন যার নং-১০৯৩৮। হাই কোর্ট ২৭/০৮/২০২৩ ইং তারিখ আবেদনটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তি করার জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। কিন্তু কোন কর্তৃপক্ষই বিষয়টি বিবেচনা করেনি। সর্বশেষ ৫/৫/২০২৫ ইং তারিখ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো পূর্বের ন্যয় কোন কার্যকরী পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকে। অবশেষে মহাপরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর ঢাকা, চেয়ারম্যান মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক ময়মনসিংহ, জেলা শিক্ষা অফিসার ময়মনসিংহ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুক্তাগাছা, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মুক্তাগাছা কে স্ব স্ব নামে আদালত অবমাননা মামলা করেন যার নং ২৮৭/২০২৫। মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশন ২০ জুলাই ২০২৫ শুনানী অন্তে ইচ্ছাকৃতভাবে অসহযোগিতার মাধ্যমে হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করার দরুন এক রুলনীতি জারি করে কেন তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ গঠন করা হবে না। আগামী ২৭/০৮/২০২৫ ইং তারিখের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এলাকা সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক বিগত ৬৮ মাস যাবত বরখাস্তের আদেশ গোপন করে যাতে সরকারী অর্থ আত্মসাৎকৃত টাকা ফেরত না দিতে হয় তার জন্য মামলা সহ যাবতীয় তথ্য গোপন করে নতুন করে এডহক কমিটি গঠন করে। পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হলেও অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষকের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, আমি বোর্ডে চেয়ারম্যান বরাবরে আবেদন করি স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য। বোর্ড কর্তৃপক্ষ বিলম্ব করাতে আমি হাই কোর্টে রিট করি। সুপ্রিম কোর্টে লিভ-টু আপিল দায়ের করিনাই। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। স্কুলের সাবেক সভাপতি মোঃ আব্দুল্লাহ আল আওয়াল স্কুল চলাকালীন সময়ে আমার কাছ থেকে স্কুলের টাকা পয়সা ও কাগজপত্র ছিনতাই করে নেয় ও আমাকে মারধর করে। এ ব্যাপারে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ আমাকে স্কুল থেকে উদ্ধার করে এবং সভাপতিকে গ্রেফতার করে কোর্টে প্রেরণ করে। হাইকোর্টে মামলা চলাকালীন সময়ে সভাপতির কার্যকাল শেষ হয়ে যায়। বোর্ড তখন জেলা শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্বভার গ্রহণ করে কমিটি করার নির্দেশ দেন। জেলা শিক্ষা অফিসার দায়িত্ব নিয়ে পরবর্তীতে কমিটি করে দেন।