জেলা প্রতিনিধি ময়মনসিংহ –ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনিকোলজি (গাইনি) বিভাগের চিকিৎসক পদে নিয়োগের পরও স্বাস্থ্যসেবা মিলছে না। অভিযোগ উঠেছে কাগজে, কলমে একজন চিকিৎসক পদে যোগদান করলেও, বাস্তবে তিনি হাসপাতালে উপস্থিত থাকেন না। ফলে উপজেলার নারী ও প্রসূতি রোগীরা গাইনি চিকিৎসার জন্য প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছেন।
ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ডাঃ খাদিজা বেগম নামের এক জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) ২০২৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তারিখে ঢাকার একটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে থেকে বদলি হয়ে ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিযুক্ত হন। অফিসিয়াল কাগজ অনুযায়ী তার যোগদান তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, এরপর ১৯ নভেম্বর ২০২৪ সংযুক্তি আদেশ জারি হয় এবং ২৩ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
তবে স্থানীয় সূত্র ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের দাবি, তিনি বাস্তবে হাসপাতালে নিয়মিত উপস্থিত ছিলেন না। অভিযোগ রয়েছে, তিনি এক প্রভাবশালী ব্যক্তি স্ত্রী, উনার সাপোর্টে এবং সহায়তায় কাগজে কর্মরত ছিলেন এবং বাসায় বসেই বেতন উত্তোলন করেন।
ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মির্জা রিয়াদ হাসান এ বিষয়ে বলেন
আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেলিভারি বিভাগ চালু করতে চাই। কিন্তু একজন গাইনি চিকিৎসক না থাকায় এটি সম্ভব হচ্ছে না। তাই এই পদে দ্রুত একজন কর্মঠ ও নিয়মিত উপস্থিত চিকিৎসক প্রয়োজন। এই এলাকার মানুষ গুলো খুব অসহায়।
নারী রোগীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে গাইনি সেবা না থাকায় নারী রোগীদেরকে বাধ্য হয়ে জেলা শহর ময়মনসিংহ অথবা ব্যক্তিগত ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন খরচ বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে গর্ভবতী নারীদের ঝুঁকিও বাড়ছে।
স্থানীয় এক গর্ভবতী নারী, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক,তিনি বলেন,আমার প্রসবের তারিখ কাছে চলে এসেছে। হাসপাতালে গাইনি ডাক্তার নেই, তাই ময়মনসিংহ যেতে হচ্ছে। এটা শুধু অর্থ নয়, সময় ও জীবনের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের মতে, এটি শুধু অবহেলার নয়, বরং প্রশাসনিক দুর্নীতির ইঙ্গিত বহন করে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন। যদি চিকিৎসক উপস্থিত না থাকেন, তাহলে বেতন ও দায়িত্ব পালনের কাগজপত্র কীভাবে অনুমোদন হয়।
একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তিনি বলেন,
সরকার চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সঠিক নজরদারির অভাবে সেটি জনগণ পাচ্ছে না। এ দায় শুধু একজন চিকিৎসকের নয়, পুরো ব্যবস্থার।
ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনি বিভাগের সেবা কার্যত বন্ধ। বাস্তবে চিকিৎসক না থাকা, অথচ কাগজে, কলমে পদ পূর্ণ থাকা একটি নীরব দুর্নীতির ইঙ্গিত দেয়। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রয়োজন কঠোর প্রশাসনিক নজরদারি, দায়ীদের জবাবদিহিতা এবং গঠনমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন উপজেলার সাধারণ জনগণ।