ধর্মীয় সম্প্রীতি ও শান্তির বার্তা ১৩টি সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে – পাহাড়ের ভ্রাতৃত্বের এক অনন্য উদাহরণ

জাহাঙ্গীর, বিশেষ প্রতিনিধি : রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ওলামা পরিষদ এক ঐতিহাসিক সম্প্রীতি সমাবেশ আয়োজন করেছে।পার্বত্য চট্টগ্রাম ওলামা পরিষদ, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এই সমাবেশে বহু ধর্ম, সংস্কৃতি ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ পুরো অঞ্চলজুড়ে ভ্রাতৃত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।এ যেন ১৩টি সম্প্রদায়ের সম্প্রীতির মিলনমেলা।
রাঙামাটি জেলার প্রায় ১৩টি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় গুরু, প্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণ এই সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষের উপস্থিতিতে পুরো অনুষ্ঠানস্থল পরিণত হয় সম্প্রীতি, সহাবস্থান ও একাত্মতার এক মহামিলনে।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এমন এক অঞ্চল, যেখানে বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষ দীর্ঘদিন ধরে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও মানবিক বন্ধনে আবদ্ধ। এই ঐক্যই বাংলাদেশের প্রকৃত শক্তি ও গৌরব।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন।
তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমি সকল ধর্ম এবং সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সমানভাবে দেখি। ধর্ম যার যার, কিন্তু দেশ সবার। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহাবস্থানই শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনের মূল ভিত্তি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র যেখানে প্রতিটি ধর্মের মানুষ সমান অধিকার ভোগ করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ যেভাবে সম্প্রীতির বন্ধনে একত্রে বসবাস করছে, তা দেশের জন্য এক অনন্য উদাহরণ।
উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ছাদেক আহমেদ।
তিনি বলেন, ধর্ম কখনো বিভেদ সৃষ্টি করে না, বরং শান্তি, মানবতা ও সহমর্মিতা শেখায়। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ শতাব্দীর পর শতাব্দী একসাথে বসবাস করছে — এটাই বাংলাদেশের সম্প্রীতির প্রকৃত চিত্র।রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিব উল্লাহ মারুফ বলেন, রাঙ্গামাটি এমন একটি জেলা, যেখানে পাহাড়, নদী ও মানুষের মতো ধর্মীয় বৈচিত্র্যও একসাথে প্রবাহিত হয়। মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, হিন্দু—সবাই এখানে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।এই ঐক্য ও শান্তির ধারা অব্যাহত রাখাই আমাদের মূল দায়িত্ব।
রাঙামাটি জেলার পুলিশ সুপার ড. এস. এম. ফরহাদ হোসেন বলেন, সম্প্রীতির এই সমাবেশ পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি, নিরাপত্তা ও পারস্পরিক বিশ্বাসের বন্ধন আরও দৃঢ় করবে।ধর্মীয় নেতারা সমাজে নৈতিক মূল্যবোধ ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম ওলামা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা হাজী শরীয়ত উল্লাহ।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা শরীয়ত উল্লাহ সকল সম্প্রদায়ের প্রতি এই শান্তি ও সহাবস্থানের ধারা অটুট রাখার এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মাঝেও এই মানবিক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম ওলামা পরিষদের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, সমাজসেবক, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ বিপুল সংখ্যায় উপস্থিত ছিলেন। পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে ছিল পারস্পরিক সৌহার্দ্য, ধর্মীয় শ্রদ্ধা ও একাত্মতার উজ্জ্বল চিত্র।
সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় সচিব মাওলানা মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিক।

অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কাপ্তাই উপজেলা থেকে আগর কর্ণফুলী নলন্দা বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি সমর বড়ুয়া, বেতবুনিয়ার মহামুনি ডলুছড়া বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি প্রকাশ কুসুম বড়ুয়া, কাউখালীর শ্রী শ্রী গীতা মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিন্টু কান্তি দে, খিয়াং জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি থইসাফরু খিয়াং, কাউখালী উপজেলার বড়ুয়া সমাজের সভাপতি কনিষ্ঠ বড়ুয়া, মারমা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি বিজয় মারমা, রাঙামাটি সদর উপজেলার আসামবস্তীর শ্রী শ্রী শীতলা মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি দুললে কান্তি মজুমদার, বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি পার্বত্য চট্টগ্রাম কচুয়া সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্মল বড়ুয়া মিলন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠনের রাঙামাটি পৌর কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার বড়ুয়া নিখিল, রাঙামাটি সদরের বন্দুক ভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও রাঙামাটি জেলার ইউনি চেয়ারম্যান এসোসিয়েশনের সভাপতি অমর চাকমা,