কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার পরেও জেলা পরিষদ সদস্যে জারলম বম রয়ে গেল ধরা ছোঁয়ার বাইরে–

রুপান্তর বাংলা ডেক্স- পার্বত্য বান্দরবানে আবারও আলোচনায় এসেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী সংগঠক ও বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য লাল জারলম বম। তার বিরুদ্ধে এবার উঠেছে সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফ – কে অর্থায়ন ও সহযোগিতা করার গুরুতর অভিযোগ উঠার পরেও তিনি ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছেন।
তার বিরুদ্ধে মৌলিক স্বাক্ষরতা প্রকল্পের কোটি টাকার আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগও রয়েছে।
শিক্ষক–সুপারভাইজারদের জন্য বরাদ্দ করা সরকারি অর্থের মধ্যে প্রায় ৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও অফিস সরঞ্জামের বরাদ্দ আত্মসাৎসহ একাধিক আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে তোলপাড় শুরু হয়েছে জেলায়।
সরকারের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মৌলিক স্বাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪ জেলা) দেশের নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় আনতে ২০১৮ সালে চালু করা হয়।
প্রকল্পটির আওতায় বান্দরবানের রুমা, থানচি ও আলীকদম উপজেলায় ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় — প্রতি উপজেলায় ৩ কোটি টাকা করে।
স্থানীয় এনজিও কমিউনিটি অ্যাডভান্সমেন্ট ফোরাম প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়, যার নির্বাহী পরিচালক ছিলেন লাল জারলম বম, বর্তমানে বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য।
প্রকল্পের অধীনে প্রতিটি উপজেলায় কয়েকশ’ শিক্ষক ও সুপারভাইজার নিয়োগ করা হয়, যাদের মাধ্যমে নিরক্ষর জনগণকে স্বাক্ষরতা শিক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।
তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে আলীকদমে ৬০০ শিক্ষক ও ১৩ জন সুপারভাইজার এবং ২০১৮ সালে রুমায় ১,০২০ জন শিক্ষক ও ১৫ জন সুপারভাইজার ও থানচিতে ১,০০০ শিক্ষক ও ১৫ জন সুপারভাইজারের জন্য ছয় মাসের ভাতা বরাদ্দ ছিল।
কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, রুমা ও থানচি উপজেলায় মাত্র দেড় মাসের ভাতা প্রদান করে বাকি অর্থ ভুয়া স্বাক্ষর, জাল কাগজপত্র ও কল্পিত তালিকার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়।
এদিকে লাল জারলম বম একইসঙ্গে কমিউনিটি এডভান্সমেন্ট ফোরাম (ঈঅঋ) নামের একটি বেসরকারি সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, চৎবংনুঃবৎরধহ ঈযঁৎপয রহ ইধহমষধফবংয-এর বান্দরবান লোকাল চার্জের নামে বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিমাসে ৬ হাজার ৩৯১ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাত লাখ টাকা) মার্কেটাইল ব্যাংক থেকে ইউসিবি ব্যাংকের একটি নির্দিষ্ট হিসাব–এ স্থানান্তর করা হয়।
এই অর্থ ‘অনাথ শিশুদের সহায়তার অনুদান’ হিসেবে দেখানো হলেও, মাঠপর্যায়ে তেমন কোনো কার্যক্রমের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে গিয়ে প্রতিবেদক দেখতে পান, অনুদানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানটির নামে বান্দরবানে কোনো শিশু আশ্রয়কেন্দ্র, শিক্ষা কার্যক্রম বা সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প চালু নেই। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, আমরা কখনও কোনো অনাথালয় বা শিশু সহায়তা কেন্দ্র দেখিনি। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজন মাঝে মাঝে বিদেশি লোকজনের সঙ্গে চলাফেরা করতে দেখি।

এ নিয়ে স্থানীয় সামাজিক সংগঠনগুলোর মধ্যেও প্রশ্ন উঠেছে— যেখানে অনুদানের টাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা ছিল, সেখানে কার্যক্রম নেই কেন?
গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক সূত্র জানায়, লাল জারলম বমের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব ও তার নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলোর আর্থিক লেনদেন বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, বিদেশি অনুদানের একটি অংশ তার ব্যক্তিগত খরচ ও কেএনএফ-এর (কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট) বিভিন্ন কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে।
একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা ব্যাংক ট্রানজেকশনগুলো ট্রেস করছি। অনুদান হিসেবে প্রাপ্ত অর্থের গন্তব্য নিয়ে বেশ কিছু অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় সচেতন মহল, নাগরিক সমাজ ও বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধিরা বলছেন, অনুদানের অর্থ যদি সত্যিই সন্ত্রাসী সংগঠনের কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়, তাহলে তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি।
বান্দরবান নাগরিক ফোরামের এক সদস্য বলেন, অবৈধ অর্থ প্রবাহ ও বিদেশি অনুদানের নামে প্রতারণা রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। যারা এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত, তাদের বিচার হওয়া উচিত।
সম্প্রতি বান্দরবানের বিভিন্ন এনজিও, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও দাতব্য সংগঠনের আর্থিক কার্যক্রম নিয়ে নজরদারি বাড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিদেশ থেকে আসা প্রতিটি অনুদানের উৎস ও ব্যয়ের দিক যাচাই করতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, অনুদান গ্রহণ ও প্রকল্প বাস্তবায়নে যথাযথ অনুমোদন না থাকলে সংস্থার নিবন্ধন বাতিলসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লাল জারলম বমের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ এখন বান্দরবানের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। সরকারি তদন্তে প্রমাণ মিললে বিষয়টি পার্বত্য অঞ্চলের এনজিও কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় বিশ্লেষকরা।—রুপান্তর বাংলা —
এই বিষয়ে জেলা পরিষদ সদস্য লাল জারলম বম বলেন তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ মিথ্যা। সরকারী বিভিন্ন সংস্থা বিষয়গুলো তদন্ত করে কোন সত্যতা পাইনি–জেএসকেপি
জেলা পরিষদ সদস্য লাল জারলম বম এর
অনুসন্ধানী নিউজ নিয়ে আসছে রূপান্তর বাংলা,, চোখ রাখুন রূপান্তর বাংলা পত্রিকার পাতায় —জেএসকেপি