ধোবাউড়ায় কৃষি প্রণোদনার লটারিতে অনিয়মের অভিযোগ,

ধোবাউড়া সংবাদদাতা—ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় সরকারি কৃষি প্রণোদনার বীজ ও সার বিতরণ কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ২০২৫–২৬ অর্থবছরের রবি মৌসুমে বোরো ধান উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণের জন্য প্রণীত তালিকা ও লটারির স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।

স্থানীয় এক কৃষক অভিযোগ করে জানান, লটারিতে তার নাম ওঠার পর নির্ধারিত দিনে কৃষি অফিসে গেলে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আল মোজাহিদ তাকে জানান, বীজ ও সার বিতরণ শেষ হয়ে গেছে। এ সময় তিনি বিতরণ তালিকা দেখতে চাইলে সেটিও দেখানো হয়নি বলে অভিযোগ করেন।

একাধিক কৃষকের অভিযোগ, প্রকৃত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের বাদ দিয়ে কিছু নির্দিষ্ট ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এমনকি লটারির সময় উপস্থিত না থাকা কয়েকজন ব্যক্তির নাম ঘোষণার ঘটনাও বিতরণ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে।

কৃষকদের দাবি, নিজেদের পছন্দের লোকজনকে সুবিধা দিতে তালিকা প্রণয়নে স্বচ্ছতা ও নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। ফলে প্রকৃত উপকারভোগীদের একটি বড় অংশ সরকারি কৃষি প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন,সব কার্যক্রম নিয়ম অনুযায়ী সম্পন্ন হয়েছে এবং তালিকা যথাযথ প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত করা হয়েছে।

তথ্য অধিকার আইনে আবেদন ফরমে তথ্য না দেওয়ার অনীহা প্রকাশ করেন।

এদিকে কৃষি প্রণোদনার সার ও বীজ বিতরণ সংক্রান্ত ২০২৪–২৫ এবং ২০২৫–২৬ অর্থবছরের তালিকা জানতে তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী নির্ধারিত ফরমে আবেদন করা হলে ধোবাউড়া উপজেলা কৃষি অফিসার কর্মকর্তা তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। ক্যামেরার বাহিরে বক্তব্যে তিনি বলেন, ফরম জমা নেওয়া হবে না,এবং আবেদনকারীকে জেলা পর্যায়ে আবেদন করার পরামর্শ দেন।

এবিষয়ে অভিযোগ রয়েছে, তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী আবেদন জমা দেওয়ার আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও কৃষি অফিসার আবেদন গ্রহণ পর্যন্ত করেনি, যা স্পষ্টতই আইন লঙ্ঘনের শামিল।

একইসঙ্গে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বিতরণ তালিকা, লটারির প্রক্রিয়া ও উপকারভোগীদের নাম জানতে চাইলে সেখানেও তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়। এ সময় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কোনো বক্তব্য দিতেও অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।

এ ঘটনায় আবেদনকারী ও সাংবাদিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পদ্ধতিতে আবেদন করা হলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর তথ্য দিতে বাধ্য। তথ্য না দেওয়া শুধু আইন পরিপন্থী নয়, বরং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পরিপন্থী।

কৃষি প্রণোদনার মতো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কার্যক্রমে অনিয়ম ও তথ্য গোপনের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষক, সাংবাদিক ও সচেতন মহল।