মুক্তাগাছায় প্রকৌশলীর মৃত্যু নিয়ে গুঞ্জন শশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা।

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় পারিবারিক কলহের জেরে শশুরবাড়ির লোকজনের সাথে বাকবিতন্ডা পরবর্তীতে রাতে প্রকৌশলীর বাড়িতে হামলা করে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহতের পরিবারের দাবী শশুর বাড়ির লোকজন এসে প্রথমে বাড়িতে হামলা চালায়। পরে তার ছেলেকে কোমড়ে গামছা বেঁধে হামলাকারীরা বাড়ি থেকে ধরে টেনে হিচড়ে নিয়ে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। নিহত প্রকৌশলীর নাম সিফাত আহমেদ বাবু(২৪)। এ ঘটনায় নিহতের পিতা মোঃ হাতেম আলী বাদী হয়ে ১১জনকে নাম উল্লেখ করে আরও ১০/১২ জনকে অজ্ঞাত নামা আসামী করে থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ জড়িত থাকার অভিযোগে মো. রতন মিয়া (২০) নামের একজনকে আটক করেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার মানকোন ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ফিরে আসার প্রায় ১০ মিনিট পর স্থানীয় লোকজন সিফাত আহমেদ বাবু (২৪) নামের ওই প্রকৌশলীকে ময়মনসিংহ-জামালপুর সড়কের অটোরাইসমিলের পেছন থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত সিফাত আহমেদ বাবু শিবপুর গ্রামের হাতেম আলীর একমাত্র পুত্র। সে ঢাকার সাভারে একটি বেসরকারি কোম্পানীতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকুরি করতো।
মামলার অভিযোগে নিহতের পারিবার জানান, প্রায় ১ বছর আগে শিবপুর গ্রামের হাতেম আলীর ছেলে সিফাতের সাথে উপজেলার কেশবপুর গ্রামের আব্দুল মালেকের মেয়ে সাথীর সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তাদের মাঝে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো। চাকুরির কারনে সিফাত বেশিরভাগ সময় ঢাকায় থাকতো। আর তার স্ত্রী বেশিরভাগ সময় তার বাবার বাড়ি কেশবপুরেই থাকতো। গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের ছুটিতে এসে সিফাত তার স্ত্রীকে আনতে গেলে শশুর বাড়ির লোকজন তাকে আসতে দেয়নি। পরে সিফাতের মা নিলুফা তার ছেলের বউকে আনতে গেলে তাকে অনেক কটু কথা শুনায়। পরে সিফাতের মায়ের সাথে সাথী আক্তার স্বামীর বাড়িতে চলে আসে। সন্ধ্যায় তাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বাকবিতন্ডা হয়। এসময় সাথী আক্তার তার বাপের বাড়ির লোকজনকে মোবাইল ফোনে খবর দেয়। খবর পেয়ে তার বাপের বাড়ি থেকে ২০/২৫ জন লোক মোটরসাইকেলে এসে সিফাতের বাড়িতে হামলা চালায়। ঘটনায় ভয়াবহ অবস্থায় গেলে সিফাতের বাবা ৯৯৯ এ ফোন করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছায়। তারপর সেখান থেকে পুলিশ ফিরে আসার ১০ মিনিট পর ময়মনসিংহ-জামালপুর সড়কের কামনা অটো রাইস মিলের পিছনের এক পতিত ক্ষেতে স্থানীয়রা সিফাতকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাকে উদ্ধার করে মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
স্থানীয় বাসিন্দা আকরাম হোসেন বলেন, এশার নামাজের সময় সিফাতের কাকা আমাকে ফোনে জানায় কেশবপুর থেকে অনেক লোকজন এসে তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। নামাজ শেষে আমি এসে দেখি পুলিশ উপস্থিত। পরে পুলিশ সেখান থেকে লোকজন সড়িয়ে চলে যায়। তার প্রায় ১০মিনিট পরে খরব পাই রাইস মিলেন পিছনে সিফাতের অচেতন দেহ পড়ে আছে। সেখান থেকে মেডিকেলে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।
এঘটনায় নিহত সিফাতের বাবা হাতেম আলী বাদী হয়ে সিফাতের স্ত্রী সাথী আক্তার(২৪), শশুর আব্দুল মালেকসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১০/১২জনকে অজ্ঞাত আসামী করে মুক্তাগাছা থানায় হত্যা মামলা করেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে মো. রতন মিয়া নামের একজনকে আটক করেছে। আটক রতন মিয়া কেশবপুর গ্রামের আব্দুল খালেকের পুত্র।
এদিকে মৃত প্রকৌশলী সিফাত হাসানের স্ত্রী সাথী আক্তার এর সাথে শুক্রবার বেলা ২টায় কথা হলে তিনি জানান আমার বিবাহ হয়েছে এক বছরের কিছু উপরে বিয়ের ২/৩ মাস পার হওয়ার পর আমি জানতে পারি আমার স্বামী অন্য একটি মেয়ের থাকে সম্পর্ক রয়েছে। এই নিয়ে আমাদের মধ্যে প্রায় ঝগড়া হতো। এরই মধ্যে আমাকে সংসার থেকে তাড়ানোর জন্য আমার শাশুরী নিলুফা লিলি বিভিন্ন ভাবে আমার উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং মটর সাইকেলসহ টাকা পয়সা ও যৌতুক দাবী করে। আমি দিতে অস্বীকার জানালে গত ০৪/০৮/২৫ইং তারিখ আমাকে ডিভোর্সের নোটিশ পাঠায়। আমি তাদের বাড়ীতে গিয়ে আমার সংসার বাচানোর জন্য তাদের হাতে পায়ে ধরি। পরবর্তীতে আমি শশুরবাড়ীতে অবস্থান করি। কয়েক দিন পূর্বে আমি পিতার বাড়ীতে আসি। গত বৃহস্পতিবার আমার শাশুরী ও চাচী শাশুরী নুনুর মা আমাকে আমার পিতার বাড়ী থেকে তাদের বাড়ীতে নিয়ে যায়। যাওয়ার পর পরই আমার স্বামী প্রকৌশলী সিফাত হাসান ও শাশুরী নিলুফা লিলি ঘরের দরজা আমাকে মারধর করতে থাকে। আমি ৫ মাসের অর্ন্তসত্তা আমার তলপেটে লাথি দেয়। আমার আর্ত চিৎকারে দরজা বন্ধ থাকায় কেউ রক্ষা করতে পরে নাই। আমাকে জোর করে ডিভোর্স পেপারে স্বাক্ষর করানোর জন্য চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে খবর পেয়ে আমার পিতাসহ দুইতিনজন মহিলা আমার শশুরবাড়ীতে গেলে তাদেরকে বাড়ীতে ডুকতে দেওয়া হয়নি। এক পর্যায়ে আমার স্বামী গেট খোলে আমার পিতাকে ভিতরে নিয়ে মারধর করে। প্রকৌশলী সিফাত হাসানের স্ত্রী সাথী আক্তার বলেন তার প্রেমিকাকে বিয়ে করার জন্যই আমাকে মা ও ছেলে মিলে ডির্ভোস দেওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে ঘটনার স্থলে পুলিশ আসলে আমার পিতাসহ আমরা চলে আসি। রাত পৌনে দশটার দিকে আমার শশুর আমাকে ফোন করে জানায় সিফাত স্টোক করে মারা গেছে। সাথী আক্তার জানান আমার স্বামীর মৃত্যুর জন্য আমার অর্থলোভী শাশুরী দায়ী।
মুক্তাগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ লুৎফুর রহমান জানান, ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাকি হবার পর ফিরে আসে। পরে সিফাত হাসানের মৃত্যুর খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। নিয়মিত মামলা নিয়েছি। আইনি প্রক্রিয়া চলমান আছে।