মুক্তাগাছায় টিপু সুলতান হত্যার ৪ মাস পরেও মামলার অগ্রগতি নেই-
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: রাতে চা খাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি টিপু সুলতান (৪০)। পরদিন সকাল ৮টায় ময়মনসিংহ খাগডহর এলাকায় রেল লাইনের পাশ থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ে লাশ উদ্ধার। জামালপুর রেলওয়ে থানা-পুলিশের ইউডি মামলার মাধ্যমে ময়না তদন্ত। পরিবারের লোকজনকে ফোনে জানানো হয় টিপু সুলতান মারা গেছে। হত্যার ৪ মাস পরেও মামলার কোন অগ্রগতি নেই। টিপুর মা জোসনা বড়ুয়া ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তিনি ছেলে হত্যার ন্যায় বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
টিপু সুলতান মুক্তাগাছা পৌরসভার কাউনডাঙ্গার চর এলাকার অবসর প্রাপ্ত পুলিশ অফিসার মৃত অথিন্দ্র লাল বড়ুয়ার একমাত্র পুত্র। তার বৃদ্ধ মা জোসনা বড়ুয়া (৮০) একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগল প্রায়। তিনি বলেন, তার ছেলেকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। একমাস পূর্বে স্থানীয় কয়েকজন মাদকসেবীদের নাম উল্লেখ করে মুক্তাগাছা থানায় অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগই ছেলের কাল হল বলে জোসনা বড়ুয়া জানান।
জানাযায়, মুক্তাগাছা শহরের কাউনডাঙ্গার চর এলাকার মৃত অথিন্দ্র লাল বড়ুয়ার (অব: এসআই) একমাত্র পুত্র টিপু সুলতান (৪০) এলাকার কিছু মাদকসেবীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। টিপুর কাছে টাকার জন্য মাদকসেবীরা চাপ প্রয়োগ করত টাকা না পেলে তাকে মারধর করতো। গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে মাকসেবীরা টিপুর কাছ থেকে টাকা না পেয়ে তাকে মারধর করে। সে সময় তার মা জোসনা বড়ুয়া ছেলেকে মারধর করায় এলাকার কিছু মাদকসেবী নাম উল্লেখ করে মুক্তাগাছা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর থেকে বিবাদীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধামকি অব্যাহত রাখে। গত ১২ আগস্ট শনিবার রাত ১০ টায় বাসা থেকে বের হয়ে আটানি বাজার চা খেতে এসে আর বাড়ি ফিরেনি। পরিবারের লোকজন রাতে খোঁজাখোজি করে পায়নি। পরদিন সকালে ময়মনসিংহ খাগডহর এলাকায় রেল লাইনের পাশে টিপুর মরদেহ পায় পুলিশ। জামালপুর রেলওয়ে থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তে পাঠায়। জামালপুর থানায় ইউডি মামলা নং ২৬/২০২৩, তারিখ ১৩/০৮/২০২৩ইং। মামলার বাদি ময়মনসিংহ-কেওয়াটখালী বাংলাদেশ রেলওয়ের টাইমকিপার আনোয়ার হোসেন।
টিপুর মা জানান, ময়না তদন্তের রিপোর্টে ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি জানান। ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে সে বাদী হয়ে ময়মনসিংহ বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৮ জনকে আসামী করে মামলা করলে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি কোতোয়ালী থানায় প্রেরণ করেন। কোতোয়ালী থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে। সে ন্যায় বিচার পাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অদ্যবধি মামলার বাদী আমাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যাননি বা মুক্তাগাছাতেও ঘটনার সূত্রপাতের স্থল পরিদর্শন করেননি।
তিনি জানান, আমার বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। ১৯৭৭ সালে বিয়ে হওয়ার পর স্বামীর চাকরীর সুবাদে মুক্তাগাছায় বসবাস শুরু করি। এখানে আমার আত্মীয় স্বজন কেউ নেই। স্বামী মারা যাওয়ার পর একমাত্র পুত্রকে নিয়েই এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছি। সমাজের সবাই মুখে আমাকে সান্তনা বা সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে ছেলে হত্যার বিচারের বিষয়ে কেউ আমাকে সহযোগিতা করছে না। আমি অসহায় ভাবে কালাতিপাত করছি।
আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার পাব কিনা জানিনা। তিনি জানান, এখানে তার আত্মীয় স্বজন না থাকায় একাকিত্ব বোধ করছেন। তাকে সহযোগিতা করার মতো কেউ নেই। এ ব্যাপারে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সেই সাথে ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।