স্টাফ রিপোর্টার: বিদ্যালয় বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা বাস্তবায়নে বাজেট বরাদ্ধে ২৯ এপ্রিল, সোমবার ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন হলরুমে এক এ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্র্যাক অধিকার এখানে, এখনই প্রকল্প আয়োজিত এ্যাডিভোকেসি সভায় ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের সম্মানিত মেয়র, বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরগণ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা,প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক ও প্রকল্প সংগঠিত ইয়ুথগণ উপস্থিতি ছিলেন। ইয়ুথ সদস্য মোঃ মাহমুদুল হাসান মামুনের সভাপতিত্বে এবং ইয়ুথ লিডার মোঃ অনিক হাসান ও কনক জাহানের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ ইকরামুল হক টিটু, মেয়র, মেয়র, ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন এবং বিশেষ অতিথী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ ইউসুফ আলী, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা(যুগ্ম সচিব), ডাঃ এইচ কে দেবনাথ, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন এবং মোহছিনা খাতুন, জেলা শিক্ষা অফিসার, এবং মু. মাহদী হাসান খান, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সদর, ময়মনসিংহ। কৈশোর-বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা ও স্কুলে বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য শিক্ষা বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ চিহ্নিতকরন ও সমাধানে কৌশল নির্ধারণের মাধ্যমে পারস্পরিক অংশিদারিত্ব তৈরি এবং কৈশোর-বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা ও স্কুলে বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য শিক্ষা বাস্তবায়নে স্থানীয় পর্যায়ে বাজেট পরিকল্পনা গ্রহণের উদ্দেশ্যে এই এ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অংশগ্রহণকারীরা বিদ্যালয়ে বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নের করনীয় ও বাজেট পরিকল্পনা নিয়ে মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করে প্রস্তাবনা আকারে নিজেদের পরিকল্পনা ও অভিমত উপস্থাপন করেন।
বিদ্যালয়গুলোর বাজেট স্বল্পতা এবং জনবল স্বল্পতার কারনে হাইজেনিক টয়লেট ও স্বাস্থ্যকর মসিক ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হয় না বলে মোছাঃ কামরুন্নাহার, সহকারী শিক্ষক, মুকুল নিকেতন হাই স্কুল সভায় উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন শিক্ষক স্বল্পতার কারনে বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য শিক্ষা পাঠদানও ব্যহত হচ্ছে। মেয়র মহোদয় যদি দৃষ্টি দেয় তাহলে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের ৪টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে। প্রতিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা হবে বলে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সভায় তুলে ধরেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর মোঃ সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু বলেন- একজন মানুষের মধ্যে বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য শিক্ষা না থাকলে সে সঠিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। আমরা চাইনা আমাদের এলাকায় কেউ বঞ্চিত হোক। আমি আমার এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতে বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য শিক্ষা পাঠদান হয় এবং মেয়েদের জন্য চেঞ্জিং রুম ও স্যানিটারী প্যাডের সুব্যবস্থা নিশ্চিত করবো। পাশাপাশি বাস স্টান্ডসহ জনবহুল এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বেবি ফিডিং কর্ণার, চেঞ্জিং রুম এবং স্যানিটারী প্যাডসহ পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা করা হবে।
উপজেলা পরিবার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তার বক্তব্যে বলেন- কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে আমরা অঙ্গিকারাবদ্ধ। বাজেট স্বল্পতার কারনে সব সময় সকল সেবা যথাযথভাবে প্রদান করা সম্ভব হয় না। এজন্য মাননীয় মেয়র মহোদয় যদি সিটি কর্পোরেশনের বাজেট হতে এদিকটা একটু দেখেন, তাহলে সকল কিশোর কিশোরীর জন্য মানসম্মত সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।
বিদ্যালয়ে বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য শিক্ষা সুষ্ঠভাবে বাস্তবায়নের জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে সভায় উল্লেখ করেন। তিনি বলেন নতুন কারিকুলাম শিক্ষার্থীদের সঠিক গঠনে সহায়ক। এজন্য নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা দরকার। সেইসাথে বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত টয়লেট নাই। থাকলেও সেগুলো হাইজেনিক ন। হাইজেনিক করতে হলে বাজেট দরকার। কিন্ত সরকারীভাবে এই খাতে তেমন বরাদ্ধ থাকে না। আবার বিদ্যালয়গুলোরও তেমন সক্ষমতা নাই,যে নিজেদের উদ্যোগে করবে। তাই আমি মনে করি এখানে স্থানীয় সরকারের ভুমিকা দরকার সবার আগে। বাজেটের ব্যবস্থা যদি সিটি কর্পোরেশন থেকে করা সম্ভব হয়, তাহলে মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা আমাদের জন্য সহজ হবে। দরকার স্থানীয় স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটিকে সক্রিয় রাখা। এজন্য ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র মহোদয় ও কাউন্সিলরগণ এক্ষেত্রে উদ্যোগী ভুমিকা রাখবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।
বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা সবার প্রাপ্য। সরকার এগুলোর বাস্তবায়নে নানামূখি উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি তথা সিটি কর্পোরেশন মেয়র হিসাবে,কাউন্সিলর হিসাবে এগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য । ব্র্যাক অধিকার এখানে এখনই প্রকল্প আজকে আমাদের সামনে কাজের যে জায়গাগুলো তুলে ধরলো, এগুলো করা আমাদেরই কাজ। আমাদের এলাকার কিশোর কিশোরীদের ভালো রাখার জন্য এবং স্কুলে বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য শিক্ষা পাঠদান ঠিকমত করানোর জন্য আমরা সবাই উদ্যোগ নেব। আপনারা যারা বিদ্যালয় কমিটিতে আছেন তারা এগুলো নিয়মিত ফলোআপ করবেন। ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন এলাকার প্রতিটি বিদ্যালয়ে সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী যাতে পাঠদান হয় তার নিশ্চয়তা আমি নিশ্চিত করতে চাই। এক্ষেত্রে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আমাকে সহায়তা করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। বিদ্যালয়ে সুস্থ্য পরিবেশে পাঠদানের জন্য স্বাস্থ্যকর টয়লেট ও স্যানিটারি প্যাডের ব্যবস্থা এই বছর বাজেটে অর্থ বরাদ্ধ করা হবে। এখানে যে সকল শিক্ষকবৃন্দ আছেন, আমি আপনাদের অনুরোধ করবো। আপনারা উদ্যোগ নেন। আমি এবং সিটি কর্পোরেশন আপনাদের সাথে আছে। আমি আপনাদের আবারো বলতে চাই এ বছর সিটি কর্পোরেশনের বাজেটে আমরা এগুলো অন্তভুক্ত করব।
অধিকার এখানে, এখনই প্রকল্পের আয়োজনে ইয়ুথ মাহমুদুল হাসান মামুন এর স্বাগত বক্তব্য মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের প্রকল্প সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন জেলা ইয়ুথ মবিলাইজার নুসরাত জাহান এবং বিদ্যালয় বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কে সরকারের উদ্যোগসমূহ ও আমাদের করনীয় তুলে ধরে আজকের এ্যাডিভোকেসি সভায় পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন ইয়ুথ লিডার কনক জাহান এবং মুক্ত আলোচনা পরিচালনা করেন এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মোঃ জিল্লুর রহমান। এ্যাডভোকেসি সভায় উপস্থিত থেকে সহায়তা করেন যোনাল ম্যানেজার-সেলপ মোঃ আকরামুল ইসলাম, ডিস্টিক্ট ম্যানেজার-সেলপ শোভন বিশ্বাস, ম্যানেজার ইন্টারনাল অডিট-পার্থ সারথী বল ও বিশ্বজিৎ হালদার,ম্যানেজার-মানবস্পদ বিভাগ- হাসান মোঃ আদেল, আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক(মাইক্রোফাইন্যান্স)- মোঃ আশরাফ আলী, ইয়ুথ লিডার সানী, শুব্রত, মিমসহ অন্যান্য ইয়ুথরা।
