ময়মনসিংহে সাংবাদিক মুহিবুল্লাহর উপর হামলার সাড়ে ১৫ বছর পর মামলা; তদন্তে মন্থর গতি

ময়মনসিংহ আঞ্চলিক প্রতিনিধি: ময়মনসিংহে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের তান্ডবে সাড়ে ১৫ বছর ঘর ছাড়া সাংবাদিক মুহিবুল্লাহ। আওয়ামীলীগের সাড়ে ১৫ বছরে বাড়িভিটা ছেড়ে পালিয়ে আশ্রয় নেয় পার্শ্ববর্তী উপজেলা শ্রীপুরে। এখনও সে বাড়ি ফিরতে পারছে না। আওয়ামীলীগের শাসনামলে তার বাড়িঘর জমিজমা সব দখল করে নেয় সন্ত্রাসীরা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জমিসহ টাকা পয়সা সব লুটে নিয়ে তাকে পথে বসিয়েছে। ময়মনসিংহের পাগলা থানার সাধুয়া গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদ খানের পুত্র মহিবুল্লাহ দৈনিক জনতার পাগলা থানার প্রতিনিধি। স্ত্রী, পুত্র-কন্যা নিয়ে সুখেই চলছিল তার সংসার। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির সমর্থক হওয়ায় আওয়ামী নেতাকর্মীর প্রতি হিংসার স্বীকার হন তিনি। এলাকায় একটি খুনের ঘটনা দৈনিক জনতায় প্রকাশ হওয়ার পর তার উপর ক্ষিপ্ত হন এলাকার আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা। তাকে হত্যার ভয় দেখিয়ে এলাকা ছাড়া করে। সে জীবন বাঁচাতে পাশ^বর্তী শ্রীপুর উপজেলায় বসবাস করতে থাকে। তার স্ত্রী পুত্র কন্যা নিজ বাড়ি সাধুয়া গ্রামে থাকতেন। গত ৩০/০৩/২০১৩ ইং তারিখ রাত ০৮ টায় সাধুয়া গ্রামে মৃত আব্দুল রহমান খাঁ পুত্র জাকারিয়া খান এর নেতৃত্বে ২০/২৫ জনের একটি সন্ত্রাসীর দল দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রসহ তার বাড়ি ঘরে হামলা চালায়। তাকে না পেয়ে তার স্ত্রীর হাতপা বেঁধে মারধর করে। স্ত্রীর কাছ থেকে জোরপূর্বক আলমারীর চাবি নিয়ে টাকা পয়সা স্বর্ণালংকার ঘরে সমস্ত কাপড় চোপর মূল্যবান মালামাল লুট করে নেয়। ছেলেকে টিপিয়ে জখম করে। ঘটনার সময় মুহিবুল্লাহ শ্রীপুরে অবস্থান করছিল।

মুহিবুল্লাহ মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে ভাড়া করা মোটরসাইকেলে নিজ বাড়ি সাধুয়া আসার পথে রাত ১০ টায় সাধুয়া প্রাইমারি স্কুলের সামনে আসামাত্র তাকে সন্ত্রাসীরা তাকে ঘিরে ফেলে। মোটরসাইকেল ড্রাইভারকে বিদায় করে দেয়। ছাপিলা গ্রামের নাছিমের হুকুমে তার মাথায় কুপ দেয় হুমায়ুন নামের সন্ত্রাসী এবং অন্যান্য সন্ত্রাসীরা তাকে পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করে মৃত ভেবে রেখে ফেলে চলে যায়। পরে স্থানীয় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসা করে সুস্থ হন। এ বিষয়ে মামলা করতে গেলে পুলিশ তার মামলা নেয়নি।

ভুক্তভোগী মুহিবুল্লাহ জানান, সন্ত্রাসীরা বাড়ির টিনের ঘর, পাকা দেয়ালের ইট পর্যন্ত সবই খুলে নিয়ে গিয়েছিল। ঘরের যাবতীয় মালামাল কিছুই রাখেনি সবই লুট করে নিয়ে যায়। ৫ই আগষ্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতনের পর বাড়ি ঘর ছাড়া অনেকেই বাড়িতে ফিরলেও সে তার বাড়িতে যেতে পারছে না সন্ত্রাসীদের ভয়ে। সন্ত্রাসীরা এখনও সক্রিয়। তাকে মিথ্যা মামলাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। মুহিবুল্লাহ সাড়ে ১৫ বছর পর গত ১০/০৯/২০২৪ ইং তারিখে ময়মনসিংহ সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাধুয়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের পুত্র জাকারিয়াসহ ৯ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন, মামলা নং ৪০৯/২৪। মামলাটি বিজ্ঞ আদালত পিবিআইকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। মামলার খবর জানার পর বিবাদীরা তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি সহ বিভিন্নভাবে হত্যার হুমকি অব্যাহত রেখেছে। মামলা করার প্রায় একমাস গত হলেও মামলার তদন্তের বিষয়ে কোন অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি বলে ভুক্তভোগী সাংবাদিক মুহিবুল্লাহ জানান। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ভুক্তভোগী।