কমলাপুর রাবার বাগানে গার্মেন্টস ও শিল্প ঐক্য পরিষদের নেতার পরিচয়ে চাঁদা দাবী

ময়মনসিংহ থেকে সিরাজুল হক সরকার: ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলার সীমান্তবর্তী মুক্তাগাছার কমলাপুর গ্রাম সংলগ্ন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের কমলাপুর রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আব্দুর রশীদ এর নিকট জনৈক মো. লিটন মিয়া মোবাইল ফোনে চাঁদা দাবী করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উক্ত মো. লিটন মিয়া নিজেকে গার্মেন্টস ও শিল্প শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ময়মনসিংহ জেলা সভাপতির পরিচয়ে তার নিজ মোবাইল ফোনে চাঁদা দাবী করে। কমলাপুর রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলার প্রশাসন সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগে জানা যায়, মুক্তাগাছা উপজেলার কমলাপুর গ্রামের মো. মাহা মিয়ার পুত্র মো. লিটন মিয়া তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে গত ২৭/০৪/২০২৫ ইং তারিখে কমলাপুর রাবার বাগানের ব্যবস্থাপকের নিকট চাঁদা দাবী করে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে ২৯/০৪/২০২৫ ইং তারিখ বিকাল ৪ টায় বাগানে কিছুপিছ মিল শ্রমিক সাথে নিয়ে লিটন মিয়া ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে যান। লিটন মিয়া পিছমিল শ্রমিকদের চাকুরী নিয়মিত করণের আশ্বাস ও উসকানি দিয়ে বিশৃঙ্খলার পায়তারা করে। এ ঘটনার জের ধরে ২ মে ২০২৫ রাতের আধারে বাগানের ৬/৯৪ নং বøকের ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের সৃজিত ৭ একর বাগানের ৩০টি রাবার গাছের চারা কেটে ফেলে। এ বিষয়ে মধুপুর থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়। যাহার নং-১২২/২৫, তারিখ: ০৩/০৫/২০২৫ ইং। উক্ত রাবার গাছ কাটার অপরাধ থেকে নিজেকে বাঁচার জন্য কতিপয় পিছমিল শ্রমিকদের উস্কানি ও প্রলোভন দেখিয়ে বাগানের সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য বিভিন্ন সরকারি অফিসে অভিযোগ দায়ের করে। বাগান ব্যবস্থাপক এ বিষয়ে মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও অফিসার ইনচার্জ মুক্তাগাছা থানাকে অবহিত করেন। লিটন তার অপকর্ম ঢাকার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাগানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারায় লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের জোন ব্যবস্থাপক সহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মোবাইলে ম্যাসেজ দিয়ে এবং কল দিয়ে ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
সূত্রমতে, ১৯৯৪ সালে ময়মনসিংহ টাঙ্গাইল জেলার সীমান্তবর্তী মধুপুর ও মুক্তাগাছা উপজেলার গা ঘেষে মুক্তাগাছার কমলাপুর গ্রামের নামে কমলাপুর রাবার বাগান ১ হাজার একর জমির উপর বাগান সৃষ্টি হয়। যদিও সম্পূর্ণ বাগানটি মধুপুর উপজেলার বেরিবাইদ উপজেলায় অবস্থিত। কমলাপুর এলাকাবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে রাবার বাগানের নামকরণ করা হয় মুক্তাগাছা কমলাপুর গ্রামের নামে। যা কমলাপুর রাবার বাগান নামে পরিচিতি লাভ করে। এখানে ৯৫% শ্রমিক মুক্তাগাছা কমলাপুর গ্রাম সহ অত্র এলাকার বাসিন্দা। শ্রমিকদের এ বাগানে কর্মে থেকে তাদের দ্বারা তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। বাগানে ১৮০টি বøকের ১৮০ জন টেপার কাজ করে। তাদের কাজ হলো রাবার বাগান থেকে রাবার কস সংগ্রহ করা। সংগৃহিত রাবার কস পক্রিয়া করে যা উৎপাদিত রাবার সরকারি ভাবে টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। দেশের রাবার উৎপাদনের ফলে বিদেশ থেকে রাবার আমদানি করতে হয় না। বৈদেশিক মুত্রা সাশ্রয় হয়ে থাকে। বর্তমানে অত্র বাগানটির কর্মকর্তা কর্মচারী ও শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করে লাভজনক অবস্থায় রয়েছে। উল্লেখ্য, শ্রমিকদের কাজের উপর ভিত্তি করে তাদের মজুরী দেওয়া হয়ে থাকে। প্রতিটি বøকে ১জন করে টেপার কাজ করে। যদি টেপার কাজ না করে তৎসংগ্রহ না করে তাহলে রাবার উৎপাদন হয় না বাগানের লোকসান হয় সরকার রাজস্ব হারায়। ব্যবস্থাপকের অভিযোগ ২/৩ জন শ্রমিক সারা বছর কাজ না করে (কস সংগ্রহ না করে) চাকুরী করতে চায়। কিন্তু সরকারের রাজস্বের স্বার্থে ২/৩ জন শ্রমিক ছাটাই করার প্রেক্ষিতে তারা ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে। ঘটনা ধামা চাপা দিতেই এসব অবিযোগ উত্থাপিত হয়েছে বলে বাগানের ব্যবস্থাপক সুপারভাইজার সহ বিভিন্ন কর্মকর্তারা জানান। বাগানের কর্মকর্তা কর্মচারীরা কতিপয় দুস্কৃতিকারী এহেন কর্মকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ ও তদন্তপূর্বক প্রশাসনের নিকট আইনানূগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছে।

এ বিষয়ে শ্রমিক নেতা লিটন মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি চাঁদার বিষয়টি অস্বীকার যান এবং শ্রমিকদের উস্কানির বিষয় এবং রাবার গাছ কাটার বিষয়টি অস্বীকার যান।