চাঞ্চল্যকর স্ট্যাটাসে সাংবাদিক মনছুর আলমের বিস্ফোরক অভিযোগ

রুপান্তর বাংলা নিজস্ব প্রতিবেদক:—

অপরাধীর পরিচয়ই কি দায়মুক্তির ঢাল?”
** ঘটনার পেছনের কালো ছায়া
** তথ্য জমা, মামলা ও তদন্ত নিয়ে অভিযোগ
** চাপ, আপোষ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন—

সাংবাদিকতা পেশা যখন শুধু তথ্য পরিবেশনের সীমায় নয়, বরং ন্যায়বিচারের মঞ্চেও দাঁড়ায়! তখন সেখান থেকে উঠে আসে সমাজের গভীরতম অন্ধকার। এমনই একটি সাহসী উচ্চারণ করেছেন কক্সবাজার শহরের স্থানীয় দৈনিক মেহেদী পত্রিকার চীফ রিপোর্টার মো: মনছুর আলম। সম্প্রতি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রকাশিত একটি চাঞ্চল্যকর বিবৃতিতে তিনি ২০২৩ সালের এক ভয়ঙ্কর অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার ঘটনা তুলে ধরে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে গা শিউরে ওঠা অভিযোগ এনেছেন।

২০২৩ সালের রমজান মাসের ১৬ এপ্রিল রাত ১১টায় চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ঘটে যায় ভয়ঙ্কর এক অপহরণ ও হত্যাচেষ্টা। মনছুর আলমের দাবি অনুযায়ী, এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে ছিলো স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এবং তৎকালীন বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল। ভিকটিমকে চিকিৎসা না দিয়ে বরং উল্টো ‘গণপিটুনি’র নামে সাজানো এক নাটক তৈরি করে দায়সারা তদন্ত দেখানোর চেষ্টা চালানো হয়। এছাড়াও ভিকটিমের বিরুদ্ধে সাজানো হয় একটি মাদক মামলা, যাতে মূল ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়।

সাংবাদিক মনছুর আলম জানান, তৎকালীন রাজনৈতিক প্রভাব এবং প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতার কারণে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে নিয়মিত মামলা করতে পারেননি। তবে তিনি ঘটনার সব তথ্য, পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং অন্যান্য প্রমাণ পুলিশ সদর দপ্তরে জমা দেন (অভিযোগ নং- E/297, তার ২২/০৬/২০২৩ইং)। পরে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে গণজাগরণের প্রেক্ষিতে সাহস করে আদালতে মামলা দায়ের করেন (সিআর মামলা নং- ১৩৩৫/২৪/বাঁশখালী)।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাঁশখালী থানার এসআই হাফিজুল ইসলাম (বর্তমানে রাউজান থানায় কর্মরত) তদন্ত প্রতিবেদন দেন, যেটি মনছুর আলমের ভাষায়, “তথ্যবিকৃত, বিভ্রান্তিকর ও রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট।”

তার প্রতিবেদনে মনছুর আলমের উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলা হয়, তিনি নাকি পুরনো বিষয় ঢাকতেই এই মামলা করেছেন এবং গণজাগরণকে ব্যবহার করেছেন। আরও বলা হয়, কোনো পত্রিকার প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। যদিও মনছুর দাবি করেন তিনি সরাসরি তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রমাণাদি দিয়েছিলেন।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক অভিযোগটি উঠে এসেছে আপোষের চাপের বিষয়ে। মনছুর আলম জানিয়েছেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা তাকে ব্যক্তিগতভাবে হুমকি দেন যে, “আপোষ না করলে বিষয়টি উপরমহলে পৌঁছে যাবে, পুলিশ সমস্যায় পড়বে।” তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “সত্যের সঙ্গে আপোষ হয় না।”

এছাড়াও তিনি প্রশ্ন তোলেন, বর্তমান ওসি সাইফুল ইসলাম, যিনি পুরো ঘটনার পটভূমি জানতেন, তিনি কীভাবে এমন পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদন অনুমোদন দিলেন? তাঁর এই ভূমিকা প্রশাসনিক দায়িত্বশীলতার মধ্যে পড়ে কিনা, তা নিয়েও উত্থাপিত হয়েছে প্রশ্ন।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মনছুর আলম প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি জিজ্ঞেস করেছেন, “যদি অপরাধীর পরিচয়ই তাকে দায়মুক্তি দেয়, তাহলে সাধারণ মানুষের আইন ও ন্যায়বিচারের আশ্রয় কোথায়?”

তার আহ্বান, সত্যের পক্ষে নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। অপরাধ নয়, অপরাধীর পরিচয় যেন বিচারের পথে বাধা না হয়। প্রশাসন হোক নৈতিকতা ও জবাবদিহিতার প্রতিচ্ছবি।

একজন সাংবাদিক যখন নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘটনার সত্যতা তুলে ধরেন, তখন তা শুধুমাত্র একটি অভিযোগ নয় বরং একটি রাষ্ট্রীয় কাঠামোর স্বাস্থ্য পরীক্ষা। এই ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক ভূমিকা প্রমাণিত হলে তা শুধুমাত্র একটি ব্যর্থ তদন্ত নয়, বরং পুরো বিচারব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর চরম আঘাত বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিক।

মনছুর আলমের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, তিনি কোনো প্রতিহিংসা নয়, বরং ন্যায়বিচারের দাবিতে সোচ্চার। সমাজ ও রাষ্ট্র কীভাবে তার এই সাহসিকতার উত্তর দেয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।