কখনো রিক্সা চালক কখনো ঘটক বেশে ওসি বোরহান উদ্দিন খান

মো  হুমায়ুন কবির, গৌরীপুর, ময়মনসিংহঃ একজন থানা কর্তৃপক্ষ যদি হয়ে যান ঘটক আর শুরু করেন ঘটকালি তবে বিষয়টি নিঃসন্দেহে রহস্যজনক। শুধুই কি ঘটক? কখনোবা রিক্সা চালকও বটে! প্রয়োজন সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে রূপ পাল্টিয়ে নিজের বহুমাত্রিক চরিত্রই ফুটিয়ে তুলেছেন অফিসার ইন-চার্জ বোরহান উদ্দিন খান।

অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি, এলিট ফোর্স র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)সহ বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে নিষ্ঠা আর সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এবার দায়িত্ব নিয়েছেন ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানার অফিসার ইন-চার্জ হিসাবে। কঠোর পেশাদারিত্ব আর নিজের দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই অপরাধীদের ধরতে মূলত নিজের রূপ পাল্টে নেন বোরহান উদ্দিন খান। এভাবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপ ধারণ করে গ্রেফতার করে চলছেন হত্যা, মাদক, জুয়া, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনসহ চাঞ্চল্যকর সব মামলার পলাতক আসামীদের।

চলতি মাসে ঘটক এবং রিক্সা চালক সেজে সন্ধান বের করে গ্রেফতার করেছেন দীর্ঘদিনের পলাতক বিভিন্ন মামলার একাধিক আসামী। শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) দিনগত রাতেও গ্রেফতার করেছেন গৌরীপুরের তিন বছর পূর্বের চাঞ্চল্যকর একটি হত্যা মামলার আসামী। হত্যায় অভিযুক্ত এই আসামী  গৌরীপুর স্টেশন রুটের কনু মিয়ার ছেলে মাদকসেবি মো. সাজন (২৪)।

অফিসার ইন-চার্জ বোরহান উদ্দিন খান এনএনবি বাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ২০১৭ সালের ২ আগস্ট, উপজেলার পশ্চিম ভালুকা থেকে নিখোঁজ হয় রাসেল মিয়া নামে এক যুবক। পরে ৫ আগস্ট, উত্তর বাজার এলাকার তালাবদ্ধ একটি ঘর থেকে সেই যুবকের গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় রাসেলের বাবা ইদ্রিস আলী সাজন, টগর ও জনিকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এযাবৎ পলাতক ছিল সাজন। দীর্ঘদিন আত্মগোপন করে থাকা সাজনকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হন ওসি বোরহান উদ্দিন খান। গ্রেফতারের খবরে মামলার বাদিসহ এলাকাবাসী ব্যাপক আনন্দিত হয়েছেন।

এছাড়াও বোরহান উদ্দিন খান সম্প্রতি সময়ে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ চেষ্টা ও ধর্ষণ পৃথক পাঁচটি অভিযোগে অভিযুক্ত পাঁচজনকেই গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। অভিযোগকারীদের মধ্যে ছিলো স্কুলছাত্রী, গার্মেন্টস কর্মী ও গৃহবধূ। অতীতের ন্যায় কর্ম স্পৃহা আর জনসেবামূলক কাজে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে নিজ ডিপার্টমেন্টে বারবার তিনি  নির্বাচিত হয়েছেন শ্রেষ্ঠ অফিসার। ময়মনসিংহ রেঞ্জের আওতাধীন নেত্রকোনা মডেল থানা এবং বর্তমান কর্মস্থল গৌরীপুর থানা দুই থানাতেই সুনামের সাথে কাজ করে ঊর্ধ্বতনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। অর্জন করে নিয়েছেন ডজনখানেক পুরষ্কার ও সনদ। কর্মদক্ষতায় ১২ দফায় শ্রেষ্ঠ অফিসার নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

করোনাকালের শুরু থেকে মানবিক কর্যক্রম পরিচালনা করে সর্ব মহলে নতুন করে নিজেকে মেলে ধরতে সফল হয়েছেন বোরহান উদ্দিন খান। আপদকালীন এ সময়ে কর্মহীন বেকার হয়ে পড়া মানুষের দ্বারেদ্বারে ছুটেছেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে। এতে করে যেমন খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত হয়েছে  ঠিক তেমনি অসহায় মানুষের মুখে ফুটেছে হাসি।

জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, গৌরীপুর থানা সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক পুলিশ সদস্য হেডকোয়ার্টারসের নির্দেশনা মেনে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর । কুইক রেসপন্স নীতিতে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা। সেবা নিয়ে আপত্তি জানানোর কোনো সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ৯৯৯ ছাড়াও যেকোনো সমস্যায় মানুষের ডাকে ছুটে যাচ্ছে পুলিশ।