প্রতিবেদক : দেশে করোনাভাইরাসের লাগাম টেনে ধরতে সরকারের জারি করা সাত দিনের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) দ্বিতীয় দিন চলছে। এ নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কেট খোলার দাবি জানিয়েছেন রাজধানীর নিউ মার্কেট ও এর আশপাশের মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর অন্যতম বৃহত্তর পাইকারি বাজার চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, নীলক্ষেত, চাঁদনীচক শপিং কমপ্লেক্স, নিউমার্কেটসহ আশপাশের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা এ দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করার চেষ্টা করেন। বেলা ১১টার দিকে মার্কেট খোলার দাবি নিয়ে মানববন্ধনের উদ্দেশে তারা চাঁদনীচকের সামনে জড়ো থাকেন। এরপরই পুলিশ তাদেরকে বুঝিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেন।
পুলিশের অনুরোধে সবাই চলে গেলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাপড়ের দোকান খোলার দাবিতে প্রখর রোদের মধ্যেই মিরপুর রোডে প্ল্যাকার্ডসহ বসে পড়েন ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা আফরিন। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় সড়কটিতে বসে দাবি জানিয়েছেন এ নারী। একা একাই জানালেন নিজের দাবি। রোদ, করোনা দুটোই উপেক্ষিত হলো ক্ষুদ্র এ নারী উদ্যোক্তার কাছে।
ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। আমার মতো অনেক ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাই এই মার্কেট থেকে কাপড় কিনে নিয়ে পাড়ায় বিক্রি করেন। কিন্তু এখন মার্কেট খোলা না থাকার কারণে আমরা কাপড় কিনতে পারছি না। তাছাড়া আমরা সারা বছর অপেক্ষা করি, রমজানের ঈদে ভালো বিক্রির আশায়। কিন্তু এখন যদি দোকান খোলার অনুমতি না দেওয়া হয় তবে পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।
মানববন্ধনের জন্য জড়ো হওয়া ব্যবসায়ীরা জানান, কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও মার্কেট খুলে দেওয়া হোক। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা ব্যবসা পরিচালনা করব। করোনা সংক্রমণের জন্য গত বছর লকডাউন থাকায় যে ক্ষতি হয়েছে সেই ক্ষতি এখনও পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। এ জন্য রমজানকে কেন্দ্র করে মার্কেট খুলে দিতে হবে। এরপর পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেন।
ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খুলে দেওয়া এখন সময়ের দাবি। ‘লকডাউন’ কার্যকর হলে পুরোদমে তা কার্যকর করতে হবে। কিছু কিছু জায়গা খুলে দিলে এতে লকডাউন কার্যকর হবে না। বইমেলা তো চলেছেই। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কিছু জায়গায় যদি শিথিল করা হয় তাহলে ব্যবসায়ীদেরও ব্যবসা চালাতে সুযোগ করে দিতে হবে।
চাঁদনী চক শপিং কমপ্লেক্সের বিজনেস ফোরামের সম্পাদক মো. মনির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এভাবে দিনের পর দিন দোকান-মার্কেট বন্ধ রাখলে আমাদের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। এমনিতেই গত বছর বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন আমরা হয়েছি, যা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। আমরা চাই যেন সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কেট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। এতে করে আমরা সবাই উপকৃত হব।
বৃহত্তর এলিফ্যান্ট রোড ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সহ-সভাপতি এবং আল্পনা প্লাজার সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বিল্লু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইতোপূর্বে দীর্ঘদিনের লকডাউনে আমাদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। আমরা আর এই ক্ষতি চাই না। আমরা চাই, যেন সরকার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মার্কেট খোলা রাখার অনুমতি দেয়। তাছাড়া এটি শুধুমাত্র আমাদের ব্যবসায়ীদের লাভের জন্য নয়, বরং আমাদের দোকানগুলোতে হাজার হাজার কর্মচারীরা কাজ করছেন। এই পরিস্থিতিতে তারা অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন।