অধিগ্রহণ না করেই ব্যক্তি জমিতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ(সিডিএ)’র সড়ক নির্মাণের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণসহ ৭ দফা দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর চট্টগ্রাম কালুরঘাট সেতু হতে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক কাম বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য বন্দর-বাকলিয়া মৌজার জমি ভূমি অধিগ্রহণ আইন ২০১৭ (২০১৭ সনের ২১নং) আইন অনুযায়ী অধিগ্রহণ না করে, গত ৯ এপ্রিল ২০১৯ ইং তারিখে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা মোতাবেক জমির মৌজা মূল্যের তিন গুণ ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ প্রকল্পের কাজ শুরু করার পূর্বে জমির ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ না করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিঃ এর সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে গত ৫/৬ বছর যাবৎ বাকলিয়াবাসীকে চাষাবাদ বঞ্চিত করে জোর পূর্বক ব্যক্তি জমি দখল করে সড়ক নির্মাণ করাই সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান জনাব আবদুচ ছালামসহ অত্র প্রকল্পে নিয়োজিতি সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ও বিদ্যমান ভূমি অধিগ্রহণ আইন ২০১৭ মোতাবেক প্রকল্পের কাজ সাময়িক স্থগিত রেখে মৌজা মূল্যের ৩ (তিন) গুণ ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য বাকলিয়াবাসীর পক্ষে ২৭ জুন তেজগাঁও ঢাকাস্থ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক এবং ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিকদের সংগঠন বাকলিয়া-বন্দর মৌজার সরকারী প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিক কল্যাণ পরিষদ-এর আহ্বায়ক আলমগীর নূর।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রেরিত স্মারকলিপিতে সিডিএ’র কর্মকর্তাদেও ৫০%, ৩০%, ২০% কমিশন বাণিজ্যের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণসহ সিডিএ’র বেআইনী অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া রোহিত করে বিদ্যমান আইনে মাননীয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এল. এ. কেস মূলে (৩ ধারা/ ৬ ধারা/ ৭ ধারা/৮ ধারা) নোটিশ জারি ও ইস্যুর মাধ্যমে বর্ণিত প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের দাবী করেছেন ভূমি মালিকরা। অধিকন্তু কমিশন না দিলে ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকের আবেদন ফাইলও গায়েব হয়ে যায় মর্মে অভিযোগ করা হয়েছে স্মারকলিপিতে।
ইতিপূর্বে গত ২১/০৩/২০১৯ ইং তারিখে মাননীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী বরাবরে এবং গত ২৭/১১/২০১৯ ইং তারিখে মাননীয় জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম বরাবরে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বর্ণিত প্রকল্প বাস্তাবায়নে অনিয়ম, দূনীতি ও জনহয়রানির বিষয় উল্লেখ করে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন বৃহত্তর বাকলিয়াবাসী। অথচ, তার কোন সুফল আজ অবধি ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিকরা পায়নি। অধিকন্তু, উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের সিডিএ’র দুর্নীতির বিষয়ে মাননীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী এবং মাননীয় জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম বরাবরে স্মারকলিপি প্রদানের বিষয় অবগত হয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নিজেদের অপকর্ম ঢাকার কুটকৌশল হিসেবে গত ২৪-০৩-২০১৯ ইং তারিখে ‘দৈনিক আজাদী’, ‘দৈনিক পূর্বকোণ’ এবং ২৫-০৩-২০১৯ ইং তারিখে ‘দৈনিক ভোরের কাগজ’ পত্রিকায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকল্প পরিচালক রাজীব দাশ কর্তৃক গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। মূলতঃ তৎকালীন সময়ে গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত বক্তব্যসমূহের মাধ্যমে সিডিএ নিজেদের অপকর্ম ঢাকার কূটকৌশল নিয়েছে। কিন্তু ‘গণ বিজ্ঞপ্তি. নিয়ম অনুয়ায়ী প্রকল্পের কার্যক্রম শুরুর আগেই দেওয়া উচিত ছিল। স্মারকরিপিতে ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক ও মালিকদের আন্দোলনকারী সংগঠন বাকলিয়া-বন্দর মৌজার সরকারী প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিক কল্যাণ পরিষদের আহ্বায়ক ও ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিক আলমগীর নূর আরো উল্লেখ করেন এবং অভিযোগ করছেন ১ নং খাস খতিয়ানের টাকা আতœসাৎ করার জন্যই সিডিএ এর তৎকালীন চেয়ারম্যান জনাব আবদুচ ছালামের প্রবর্তিত নীল নক্শার বাস্তবায়নের অপচেষ্টা করে চলেছেন সিডিএ এর বর্তমান কতর্ৃৃপক্ষ। তিনি আরো উল্লেখ করেন গত ৩০-০৩-২০১৯ ইং তারিখে “কালুরঘাট সেতু হতে চাক্তাই খাল পর্যন্ত বাঁধ-কাম রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে ভূমির ক্ষতিপূরণ সরকারী নিয়ম অনুযায়ী প্রদান করা ও ক্ষতিগ্রস্থ ভূমির মালিকদের হয়রানি ও মিথ্যা মামলা প্রতিবাদ শীর্ষক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)’র বিরুদ্ধে বাকলিয়াবাসীর পক্ষে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন ১৮ নং, পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলহাজ্ব মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ। উল্লেখ্য, বিগত ০৫-০৩-২০১৯ ইং তারিখের ‘দৈনিক ভোরের কাগজ’ পত্রিকায় “ক্ষতিপূরণ না দিয়ে সড়ক নর্মিানের কাজ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ শিরোনামে এবং ২৬-০৮-২০২০ ইং তারিখে ‘দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রথম পাতায় চাক্তাই তেকে কালুরঘাট পর্যন্ত অধিগ্রহণ না করেই ব্যক্তি জমিতে সিডিএ’র সড়ক শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রসঙ্গতঃ প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে প্রেরিত স্মারকলিপিতে ভূমি মালিকরা প্রশ্ন করেছেন “চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন বাড়ই পাড়া হতে কর্ণফুলী পর্যন্ত খাল খননের জন্য এল-এ মামলা নং ৩২/২০১৮-২০১৯ ইং এবং ০৫/২০১৯-২০২০ইং মূলে অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তির ক্ষতিগ্রস্থ মালিকদেরকে মৌজামূল্যের ৩(তিন) গুণ ক্ষতিপূরণ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে ইতিমধ্যে। ৭(সাত) ধারা নোটিশ ইস্যু করেছে। এমতাবস্থায় একই শহর, একই নগরবাসী, একই সরকারের সংস্থা হতে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকরা কেন ৩ (তিন) গুণ ক্ষতিপূরণ পাবেনা? কেন আইনের বৈষম্যের শিকার হবো আমরা (বাকলিয়াবাসী) ?

স্মারকলিপিতে উল্লেখিত ৭(সাত) দফা দাবিগুলো হচ্ছে ঃ ১) চট্টগ্রাম কালুরঘাট থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক ও বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজে স্বেচ্ছাচারিতা, আইন লঙ্ঘণ, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান জনাব আবদুচ ছালামসহ প্রকল্পের দায়িত্বরত বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা, ২) সিডিএ কর্তৃক চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়ায় ক্ষতিপূরণ না দিয়ে জোরপূর্বক জবরদখল করে অত্র চলমান প্রকল্পের কাজ সাময়িক স্থগিত রেখে আগে ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিককে ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করা, ৩) মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক ও ভূমি অধিগ্রহণ আইন ২০১৭ মোতাবেক ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিককে জমির মৌজা মূল্যের ৩ (তিন) গুণ ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করা, ৪) অত্র অধিগ্রহণের আওতামুক্ত অথচ সিডিএ কর্তৃক বেআইনীভাবে ভূমি মালিককে চাষাবাদ বঞ্চিত করে জোরপূবর্ক গত ৫/৬ বছর যাবত ব্যবহৃত ভূমির ভাড়া পরিশোধ করা, ৫) ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তির জন্য সোচ্ছার ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিকদেরকে সিডিএ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন মিথ্যা মামলা-হামলায় গ্রেপ্তার, জেল, জুলুম, হুলিয়া দিয়ে হয়রানি থেকে রক্ষা করা, ৬) বর্ণিত অধিগ্রহণকৃত রাস্তা কাম বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় বৈধ বিএস খতিয়ান ও বৈধ বিএস দাগাদিভূক্ত পূর্ণ ও নিরঙ্কুশ জমির ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করাসহ ৭) সিডিএ’র বেআইনী অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া রোহিত করে মাননীয় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এল. এ. কেস মূলে (৩ ধারা/ ৬ ধারা/ ৭ ধারা/ ৮ ধারা) নোটিশ জারি ও ইস্যুর মাধ্যমে বর্ণিত প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ৭ (সাত) দফা দাবী বাস্তবায়নের জন্য স্মারকলিপি প্রদান করেছে চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়ার ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকদের সংগঠন ‘বাকলিয়া-বন্দর মৌজার সরকারী প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিক কল্যাণ পরিষদ।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে, উক্ত প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকরা ভূমির মৌজামূল্যে ৩(তিন) গুণ ক্ষতিপূরণ প্রদারেন দাবিসহ উক্ত ৭ (সাত) দফার বাস্তবায়নসহ অতিদ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহৃদয় ও যথোপযুক্ত হস্তক্ষেপ কামনা করেছে বাকলিয়ার ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকরা। অন্যতায়, তাদের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন হওয়ার সমূহ আশংখা ব্যক্ত করেছেন ভূমির মালিকগণ। বাকলিয়াবাসীর ন্যায্য দাবী আদায় না হলে রাজপথে মরণপণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ আবাদি ভূমি মালিকরা।