দীঘিনালায় এসএসসি পরিক্ষার্থীকে বলাৎকার অভিযোগ নেয়নি ওসি

দীঘিনালা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি রুপান্তর বাংলা –খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলায় এক এসএসসি পরিক্ষার্থীকে (১৬) বলাৎকারের অভিযোগ উঠেছে একই এলাকার মোঃ নুরুল আলম (৪৫) এর বিরুদ্ধে।

জানাযায়, উপজেলার মেরুং ইউপির ৫ নং ওয়াডের কাঁঠাল বাগান ৪ নম্বর কলোনি এলাকার মোঃ নুরুল আলম কতৃক একই এলাকার এসএসসি পরীক্ষার্থীকে বিগত তিন বছর ধরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে বলাৎকার করে আসছে বলে অভিযোগ উঠছে।

সর্বশেষ গত ২০ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে সুজন ও তার সহপাঠী মোঃ শাহানবী বাজার থেকে কাঁঠাল বাগান এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন।

এমতাবস্থায় অভিযুক্ত নুরুল আলম ভুক্তভোগী সুজনকে ব্যক্তিগত কথা আছে বলে সুজনকে একটু আড়ালে এসে কথা শোনার জন্য একাধিকবার অনুরোধ করেন। পরবর্তীতে সুজনের সহপাঠী শাহানবী উপরে দাঁড়িয়ে থাকলে ব্যক্তিগত কথা শোনার জন্য সুজনকে স্থানীয় নদীর পাশে নিয়ে শরীরের বস্ত্র খুলে জোরপূর্বক বলাৎকার করার চেষ্টা করে। সুজন ছুটাছুটি ও চিৎকার করলে, চিৎকার শুনে সুজনের সহপাঠী শাহানবী দৌড়ে এসে সুজনকে বলাৎকার হওয়া থেকে রক্ষা করে। এরমধ্যেই শব্দ শুনে স্থানীয় মোঃ হযরত আলী ও মোঃ রাজুসহ কয়েকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ।

পরে অভিযুক্ত নুরুল আলম (নুরালম) বলাৎকারের বিষয়টি গোপন রাখতে সুজন ও তাঁর সহপাঠী শাহানবী সহ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যারা উপস্থিত হয়েছিলেন সবার হাত-পা ধরে ও টাকা দিতে চায় এবং এমন খারাপ কাজ আর করবেনা মর্মে নুরুল আলম ক্ষমা চান। তাদেরকে কোন ভাবে ম্যানেজ করতে না পারায় উল্টো তাঁদেরকে বিভিন্ন অভিযোগে মামলা দেয়ার হুমকি দেয় নুরুল আলম।

বিষয়টি জানাজানি হয়ে পরলে অভিযুক্ত নুরুল আলম টাকার বিনিময়ে সমাজের প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন।

ভুক্তভোগী এসএসসি পরিক্ষার্থী মোঃ সুজন জানান, নুরুল আলম দীর্ঘ তিন বছর আগে থেকে চাকরির মাঝে ছুটিতে আসলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে আমার সাথে অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়ার জন্য প্রস্তাব দিতেন ।

আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হাত দিয়ে খারাপ কথা বলতেন, টাকার লোভ দেখাতেন। সর্বশেষ গত ২০ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আমার বন্ধু শাহানবী সহ বাজার থেকে কাঁঠাল বাগান এলাকা দিয়ে আসার পথে নুরুল আলমের সাথে দেখা হয়। সে আমার সাথে একান্ত কথা আছে বলে বারবার অনুরোধ করেন আড়ালে গিয়ে কথাগুলো শোনার জন্য।

শাহানবীকে উপরে রেখে নুরুল আলম আমাকে নদীর পাশে নিয়ে নিজে জোর করে আমার পরনের কাপড় খুলে আমাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে, এবং আমার সাথে জোরাজুরি করতে থাকে। আমি চিৎকার দিলে আওয়াজ শুনে শাহানবী উপর থেকে দৌড়ে এসে নুরুল আলমের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করে।

পরে আমাদের কথার শব্দ শুনে আমাদের এলাকার হযরত আলী ও রাজুসহ আরো কয়েকজন আসে।

বিষয়টি নিয়ে সুজনের মা আনোয়ার বেগমের সাথে কথা বলে জানাযায়, নুরুল আলমের এমন কান্ডের সঠিক বিচার চেয়ে সমাজের সভাপতি ডাঃ মোঃ শফিকুল ইসলামের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো সুরহা পায়নি, কারন অভিযুক্ত নুরুল আলম তার আপন ভায়রা। পরবর্তীতে বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য সোঃ হোসেনকে জানালে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে বসবে বসবে বলে এক সপ্তাহ শেষ হলো এখনো বসেনি।

সুজনের সহপাঠী শাহানবী জানান, ২০ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আমি, সুজন বাজার থেকে যাচ্ছিলাম। রাস্তায় নুরুল আলমের সাথে দেখা হলে সুজনের সাথে জরুরি একান্ত কথা আছে বলে আড়ালে গিয়ে শোনার জন্য বারবার অনুরোধ করেন।

আমাকে উপরে দাঁড়াতে বলেন, সুজনকে নিয়ে আড়ালে যায় নুরুল আলম। কিছুক্ষণের মধ্যেই সুজনের ছুটাছুটির শব্দ শুনে দৌড়ে গিয়ে দেখি পরনের কাপড় খুলে সুজনের সাথে খারাপ কাজ করার চেষ্টা করছে নুরুল আলম।

স্থানীয় হযরত আলী ও রাজু জানান, সন্ধ্যার পরে নদীর পাশে বেশি লোকজনের কথা শুনে দৌড়ে গিয়ে দেখি নুরুল আলম সুজনকে খারাপ কাজ করা জন্য চেষ্টা করলে ঐঅবস্থায় নুরুল আলম, সুজন ও শাহানবীর মধ্যে কথোপকথন হচ্ছে। তখন বিষয়টি আমাদের কাছে পরিস্কার হয়ে যায়।

নুরুল আলম তাঁর এমন কর্মকান্ডের জন্য আমাদের সকলের হাত-পা ধরে ক্ষমা চান ও টাকা দিতে চান। আমরা রাজি না হলে আমাদের কে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেয় ও কিশোর গ্যাং বলে মামলায় ফাসিয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়।

এবিষয়ে অভিযুক্ত নুরুল আলমকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলেও রিসিভ করেনি এবং এসএমএস দিয়ে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

সমাজের সভাপতি মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, আনোয়ারা বেগম (সুজনের মা) সুবিচার চেয়ে একটি লিখিত আবেদন করেছেন।

সেটা যাচাই-বাছাই করে সমাজের মুরুব্বিসহ যারা আছেন সবাইকে নিয়ে সামাজিকভাবে বসতে চেয়েছি। পরবর্তীতে জানতে পারি তারা দু’পক্ষই আইনের শরণাপন্ন হয়েছে। তাই ব্যাপারটি নিয়ে সামাজিকভাবে আর বসা হয়নি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ হোসেন জানান, আমার কাছে বিষয়টি অন্য ভাবে এসেছে, কয়েজন ছেলে কিশর ঘ্যাং হয়ে একজনকে ধরার অভিযোগে থানা থেকে পুলিশ আসলে বিষয়টি আমরা সামাজিকভাবে সমাধান করবো বলে রেখে দেই।

উভয়পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি (শুক্রবার) সামাজিকভাবে বসে সমাধান করে দেবো।

ভুক্তভোগি সুজনের মা গত ২৬ জানুয়ারী দীঘিনালা থানায় অভিযোগ করতে গেলে, স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ হোসেন বিষয়টি সামাজিকভাবে বসে সমাধান দিবে মর্মে নিয়ে আসেন। বিষয়টি নিয়ে সমাজের বাসিন্দা মোঃ হান্নান ও মোঃ ইয়াসিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নুরুল আলম প্রভাবশালি হওয়ায় বিচারে গরিমসি করে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন কিছু প্রভাবশালীরা।

তবে ইতিপূবে এমন আরো অভিযোগ ছিল নুরুল আলমের বিরুদ্ধে তাই এলাকাবাসী ক্ষোভে ফুসে উঠছেন। উক্ত বিষয়ে মতামতের জন্য ওসি দীঘিনালার সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তার মোবাইলের সংযোগ কোন ভাবে পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*