এম.টুকু মাহমুদ‚হরিণাকুণ্ডু (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধিঃ প্রভাতের শিশির ভেজা ঘাস আর ঘণ কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনি বার্তা। আর শীত এলেই যেন প্রত্যন্ত গ্রামঞ্চলে জামাই আদর সহ মুখরোচক খাবার আয়োজনের কমতি নেই, বিশেষ করে খেজুর গুড় বা রস দিয়ে তৈরী খাবার গুলোর গুরত্ব বেশি।
তাইতো চলতি মৌসুমেও ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাজারো খেজুর গাছের রস সংগ্রহের জন্য গাছিরা গাছ প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছে। গাছিরা বছরজুড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত থাকলেও বর্তমানে খেজুরগাছের রস ঘরে আনার জন্য ব্যস্ততায় দিন কাটাছে।
প্রতিবছরে ন্যায় এ বছরও মৌসুমী গাছারিরা কোমরের দড়ি বেঁধে খেজুরগাছে ওঠে তাদের নিপুন হাতে গাছের ছালতোলা, চাঁচ ও নলি বসানোর কাজ শেষে রস সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছে। ধারালো দা দিয়ে খেজুর গাছের সোনালী অংশ বের করা হয়, যাকে বলে চাঁচ দেওয়া। উপজেলার পৌরসভা এবং আটটি ইউনিয়নে ব্যক্তি মালিকানাধীন এবং সরকারী অসংখ্য খেজুর গাছ রয়েছে।
এ অঞ্চলের প্রত্যেকটি গাছ থেকে ৫থেকে ৮লিটার পর্যন্ত রস সংগ্রহ সম্ভব হয়। শীত যত বাড়বে খেজুরের রসের স্বাদ তত যেন বাড়ে। আবহমান কাল থেকে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে মানুষদের শীতের সকালের নাস্তাতে মুড়ির সাথে রস না হলে যেন চলে না।
শীতকালীন পিঠাপুলি, পায়েস সহ রকমারি খাবার তৈরীতে রস ও খেজুরগুড়ের ব্যপক চাহিদা রয়েছে। রসের ফলন ও বাজারে চাহিদা থাকার উপর নির্ভর করে খেজুর গুড়ের মুল্য। গাছিরা খেজুরের লালিগুড় তৈরী ছাড়াও পাটা গুড়, বাটি গুড় এবং রস প্রিয়সী মানুষদের জন্য ফেরী করে রস বিক্রয় করে। দেশজুড়ে খেজুর গুড়ের চাহিদা বেশি থাকায় গাছিদের বাড়ি থেকেই পাইকারী গুড় বিক্রয় করে সময় ও অর্থ দুটোই লাভবান হন এ অঞ্চলের গাছারিরা। তবে গাছিদের অভিযোগ খেজুর গুড় সংরক্ষনের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় বেশি দিন বাড়িতে রাখা যায় না।
বিশেষ করে উপজেলার নারায়নকান্দী, সিঙ্গা, বলরামপুর, কুলবাড়িয়া, কালাপাহাড়িয়া, গাড়াবাড়িয়া, শিতলী, দখলপুর ‚ পারদখলপুর, সোনাতনপুর, গাগেন্না, ভাতুড়িয়াসহ বিভিন্ন গ্রামে খেজুরের গাছের সংখ্যা অন্য এলাকার চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি বলে জানা যায়।
শীত মৌসূমের শুরু থেকে এসব গ্রামে খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির কাজ চলে পুরাদমে। গাড়াবাড়িয়া গ্রামের চাঁন আলীর খেজুর গাছ রয়েছে ১৭০টি। নারায়নকান্দী গ্রামের জুলহাক আলীর ১২০টি এবং পারদখলপুর গোলজার হোসেন ভাগে গাছ কাটে ৮০টির মতো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাফিজ হাসান বলেন, হরিণাকুণ্ডুতে প্রায় দশ হাজরের মত খেজুর গাছ আছে। এ উপজেলার খেজুরের গুড় পাটালীর সুনাম দেশজুড়ে। বানিজ্যিক ভাবে খেজুর রস এবং গুড় পা্টালী উৎপাদন করার বিষয়ে একটি পরিকল্পনা গ্রহনের উদ্যোগের বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনা করা হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। সেই সাথে নিপা ভাইস থেকে খেজুর রস মুক্ত রাখার লক্ষে প্লাস্টিকের স্থায়ী ঢাকনা ব্যবহারের বিষয়টি জনপ্রিয় করে তোলবার প্রচেষ্টা চালানো হবে বলে তিনি জানান।